শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হার্ট অ্যাটাক করে প্রতিমন্ত্রী মারা গেছেন।”
৭৪ বছর বয়সী শেখ আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেইলি রোডের বাসায় প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয় বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেইটে সাংবাদিকদের বলেন, “ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাকে সিএমএইচে নেওয়ার পথে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
প্রতিমন্ত্রীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী উনার ব্যাপারেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর জানাজা ও দাফনের বিষয়ে রোববার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “শেখ মো. আবদুল্লাহর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট ক্ষতি। তার মৃত্যুতে দেশ একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক নেতাকে হারাল।”
শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে তৃণমূল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিককে হারানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সময় আবদুল্লাহকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।
শেখ আব্দুল্লাহর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন তিনি। এরপর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশোনা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
শিক্ষা জীবন শেষে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও আইনজীবী হিসেবে গোপালগঞ্জ জজ কোর্ট ও ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন আবদুল্লাহ। খুলনার আযম খান কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত এই ভিপি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুব লীগে যোগ দেন। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া এই রাজনীতিক ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন শেখ আবদুল্লাহ। দীর্ঘদিন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ আওয়ামী লীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।