অগ্নিকাণ্ডে সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুতে ‘আপাতত’ অপমৃত্যুর মামলা

অগ্নিকাণ্ডে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুর ঘটনায় ‘আপাতত’ একটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করে পুলিশ বলছে, তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2020, 11:48 AM
Updated : 13 June 2020, 12:10 PM

দৈনিক যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নান্নু বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বাড্ডার আফতাবনগরে নিজ বাসায় অগ্নিদগ্ধ হন নান্নু। তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

নান্নুর ওই ফ্ল্যাটে ছয় মাস আগে তার তরুণ ছেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। ওই অগ্নিকাণ্ডের পর মেরামতের জন্য কিছু দিন অন্য বাসায় ছিলেন নান্নু দম্পতি।

গত জুনে আবার নিজেদের ফ্ল্যাটে ফেরত এসেছিলেন জানিয়ে নান্নুর স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় ওঠার পর থেকে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলাম। বিষয়টি ডেভেলপার কোম্পানিকে জানানোও হয়েছিল। বলেছিল, শুক্রবার কোম্পানি থেকে লোক এসে দেখবে।”

অল্প সময়ের ব্যবধানে ওই বাড়িতে দুই অগ্নিকাণ্ড ঘটনায়  এক্ষেত্রে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্তের দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেন পর পর দুই বার একই কক্ষে আগুন লাগলো। তা ফায়ার সার্ভিস তদন্ত করবে।”

আবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক কোনো কলহের যোগসূত্র রয়েছে কি না, তাও যাচাই করবেন বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাসের সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। তবে গ্যাসের কোনো গন্ধ পেলাম না। আর রান্নাঘর ঠিক আছে। যে ঘরে আগুন লেগেছে, সেই ঘরের মালামাল শুধু পুড়েছে।”

এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, “রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়া হওয়ার কথা বলছে আশপাশের মানুষ।”

মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু

ফ্ল্যাটের ভেতরে ঝগড়া অন্য ফ্ল্যাট থেকে শোনা কীভাবে গিয়েছিল- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বারান্দায়ও ঝগড়া হয়েছে বলে আশপাশের মানুষ জানিয়েছে।”

পুলিশ কর্মকর্তা পারভেজ বলেন, হাসপাতালেই নান্নুর স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবীর স্বাক্ষর নিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

“আপাতত অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। ক্রাইমসিন ও ফরেনসিক বিভাগ ঘটনাস্থলে কাজ করবে। আর ফায়ার সার্ভিস প্রতিবেদন দেবে বলেছে। যদি এখানে অন্য কিছু পাওয়া যায়, ভবন কর্তৃপক্ষে গাফিলতি বা আগুনের ঘটনায় কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তাহলে সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নান্নুর স্ত্রী পল্লবী হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, যে ঘরে তাদের সন্তান স্বপ্নিল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল, সেই ঘরেই বৃহস্পতিবার রাতে নান্নু সুইচ টিপলেই আগুন লাগে।

“রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে ও নামাজ পড়ে ভাত খেল। পরে আমরা দুজনে গেলাম স্বপ্নিলের ঘরে। ও খাটে বসা ছিল, সুইচ অন করতেই বিকট শব্দ হল, পরে দেখি ঘরে আগুন, নান্নুর শরীরের পেছন দিক জ্বলছে।”

পরে নান্নু নিজেই বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে নিজের শরীরের আগুন নেভান। ছাদে গিয়ে পাইপ এনে ঘরে ছড়িয়ে পড়া আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন তখন ছুটে এসে নান্নুর শরীরের অবস্থা দেখে হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্যরা ঘরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসোইন জানান, আগুনের খবর পেয়ে তারা আফতাবনগরের ওই ১০ তলা ভবনের অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে নান্নুর বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।