অগ্নিদগ্ধ সাংবাদিক নান্নু বাঁচলেন না

দৈনিক যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনা নান্নু মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2020, 03:26 AM
Updated : 13 June 2020, 07:17 AM

শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয় বলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাসায় দগ্ধ হন নান্নু। ইনস্টিটিউটে ভর্তির পরপরই ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

প্রায় ছয় মাস আগে তার ছেলে স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াস (২৪) দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।

নান্নুর স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, যে ঘরে তাদের সন্তান স্বপ্নিল অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল, সেই ঘরেই বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা ঘটে।

“রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে ও নামাজ পড়ে ভাত খেল। পরে আমরা দুজনে গেলাম স্বপ্নিলের ঘরে। ও খাটে বসা ছিল, সুইচ অন করতেই বিকট শব্দ হল, পরে দেখি ঘরে আগুন, নান্নুর শরীরের পেছন দিক জ্বলছে।”

পরে নান্নু নিজেই বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে নিজের শরীরের আগুন নেভান। ছাদে গিয়ে পাইপ এনে ঘরে ছড়িয়ে পড়া আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন তখন ছুটে এসে নান্নুর শরীরের অবস্থা দেখে হাসপাতালে নিয়ে যান। অন্যরা ঘরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসোইন জানান, আগুনের খবর পেয়ে তারা আফতাবনগরের ওই দশতলা ভবনের অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে নান্নুর বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।

নান্নুর স্ত্রী জানান, স্বপ্নীল মারা যাওয়ার পর তারা ওই ফ্ল্যাটে না থেকে বেশ কিছুদিন অন্য বাসায় ছিলেন। এরমধ্যে পুড়ে যাওয়া ঘর ঠিক করা হয়।

প্রায় ছয় মাস পর জুনের শুরুতে আবার এই ফ্ল্যাটে ওঠার কথা জানিয়ে পল্লবী বলেন, “বাসায় ওঠার পর থেকে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলাম। বিষয়টি ডেভেলপার কোম্পানিকে জানানোও হয়েছিল। বলেছিল, শুক্রবার কোম্পানি থেকে লোক এসে দেখবে।”

যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নান্নু আমাদের সঙ্গে আছেন বহু বছর ধরে, শুধু মাঝে কিছুদিন ছিলেন না। তখন নিজে একটি ইউটিউব চালাতেন। ছেলের মৃত্যুর পর গত মার্চ মাসে আবার যুগান্তরে যোগ দেন।”

নান্নুর মরদেহ হাসপাতাল থেকে তার আফতাব নগরের বাসায় নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি যশোরে নিয়ে সন্তান স্বপ্নিলের পাশে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু।

নান্নুর মৃত্যুতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল খায়ের এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু শোক প্রকাশ করেছেন। তারা নান্নুর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।

বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুও শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

একই সাথে পরপর দুবার একটি বাসার একটি কক্ষে আগুন লেগে পিতা-পুত্রের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তও দাবি করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।

সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুতে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদও শোক জানিয়েছেন।

এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “অগ্নিদগ্ধ হয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর অকালে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও শোকাবহ ঘটনা।”