বুধবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এসির শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। আর হাসপাতালের বর্ধিত ওই অংশে কার্যকর কোনো অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাও ছিল না।
তড়িঘড়ি করে বর্ধিত ওই অংশ গড়ে তোলার সময় ফায়ার সার্ভিসের মতামতও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভবিষ্যতে এই ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলার সময় যাতে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ঠিক রাখা হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের মতামত নেওয়া হয়, প্রতিদবেদনে সেই সুপারিশও করা হয়েছে।
“আগুন ছোট ছিল কিন্তু এর ইমপ্যাক্ট অনেক বড় হয়েছে।”
গত ২৭ মে রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশানের বেসরকারি ওই হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগলে একটি কক্ষে পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়।
পরদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেবাশীষ বর্ধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে চলছে রাজধানীর অভিজাত এলাকার হাসপাতালটি।
এছাড়া হাসপাতালে ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের আটটিরই মেয়াদোত্তীর্ণ পেয়েছে তদন্ত দল।
দেবাশীষ বর্ধনের ভাষ্য অনুযায়ী, হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা আছেন, কিন্তু তিনি ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন। প্রয়োজনীয় জনবলও ছিল না।
এমনকি ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও ছিল কিন্তু সেটির মুখ খুলে দেওয়ার মত কেউ ছিল না আগুন লাগার পর। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে তা করেছে বলে জানান দেবাশীষ।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে সে সময় তিনি বলেছিলেন, পুরোটাতেই বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া। কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না, কারণ নেগেটিভ প্রেসারের এসি ছিল; কয়েকটা এসি ছিল।
টিনশেডের বর্ধিত অংশটি উপরে টিন দিয়ে তার নিচে সিলিং করা হয়েছে। আর বেড়া দেওয়া হয়েছে পারটেক্স ও গ্লাস দিয়ে।
অগ্নিকাণ্ডে নিহতের এক স্বজন অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেছেন আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনও জমা
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশও একটি তদন্ত কমিটি গঠন কর। তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিএমপি কমিশনারের কাছে।
পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আবদুল আহাদ।
তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো হয় বলে জানান গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন নেভাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপর ছিল না।
“হাসপাতাল থেকে একজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন, তিনি হলেন ক্নিনার আরাফাত।
আগুন লাগার পর চিকিৎসক নার্সসহ অন্যান্য সবাই এগিয়ে না আসলেও আরাফাত তার মত করে চেষ্টা করেছিল। আর শেষের দিকে মেয়াদোউত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক দিয়ে কেউ কেউ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাও আগুনে সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর।”
হাসপাতালে দিনে একজন ফায়ারম্যান থাকলেও রাতে কোনো ফায়ারম্যান ছিল না বলে জানান তিনি।
এসি থেকেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ বলেন, “দাহ্য পদার্থ সমন্বয়ে তাঁবু নির্মিত করা হয়েছে আর রাজউকের কোন কোড মানা হয়নি; ছিল না কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।”
আরও খবর