শুরু হল বাজেট অধিবেশন, মাস্ক পরে সংসদে এমপিরা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শুরু হল একাদশ সংসদের অষ্টম অধিবেশন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2020, 11:47 AM
Updated : 10 June 2020, 01:11 PM

এই অধিবেশনেই বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

বুধবার বিকাল ৫টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বিশেষ পরিস্থিতিতে এ অধিবেশনে সংক্রমণ এড়াতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ব্যবস্থা।

সংসদ সদস্যদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে দূরত্ব বজায় রেখে। মাস্ক ও গ্লাভস পরে তারা অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।

অধিবেশন কক্ষে দায়িত্বরত কর্মচারীরাও মাস্ক, গ্লাভস ও মাথা ঢেকে কর্তব্য পালন করেছেন। স্পিকারের আসনের নিচে কর্তব্যরত কর্মকর্তার সংখ্যাও কমানো হয়েছে। 

অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার বলেন, “সকল স্বাস্থবিধি মেনে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হবে।”

এরপর তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন দেন। এ অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- ফারুক খান, এ বি তাজুল ইসলাম, মুহিবুর রহমান মানিক, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং মেহের আফরোজ।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার কখনও অনুপস্থিত থাকলে তাদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পরে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য̈-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০ এবং ইনকাম ট্যাক্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ-২০২০ সংসদে উপস্থাপন করেন।

অধ্যাদেশ জারির পর সংসদের প্রথম বৈঠকে তা উপস্থাপনের বিধান রয়েছে।

এরপর ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার।

সাবেক সংসদ সদস্য ওয়ালিউর রহমান রেজা, খন্দকার আসাদুজ্জামান, মমতাজ বেগম, মকবুল হোসেন, সাবেক গণপিরষদ সদস্য জহিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য কামরুন নাহার পুতুল, আনোয়ারুল কবির তালুকদার, এম এ মতিন, সৈয়দ রাহমাতুর রব ইরতিজা আহসানের মৃত্যুতেও সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা রাব্বী, সাবেক প্রধান হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর স্ত্রী সাহান আরা বেগম, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের পুত্রবধূ মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগম, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বড় ভাই এবিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, সংসদ-সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের বাবা সুশান্ত সরকার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সাদাত হুসাইন, জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর, একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মজিবর রহমান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী, সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক গোলাম রাব্বানী হেলাল, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার আজাদ রহমান, ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেম এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নারী ক্যামেরাপার্সন রোজিনা আক্তারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে মারা যাওয়া ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন-পুলিশের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ীসহ সবার জন্য শোক প্রকাশ করে সংসদ।

সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে নিহতদের স্মরণ করা হয় অধিবেশনে।

চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যুর পর সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর অধিবেশন মুলতবি রাখার রেওয়াজ আছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশেষ পরিস্থিতিতে এই অধিবেশনে কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন ৬০ জন বা তার সামান্য কয়েকজন বেশি সদস্যকে নিয়ে অধিবেশন চলবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

সংসদ কক্ষে আইন প্রণেতাদের আসনের মাঝেও দূরত্ব রাখতে দেখা গেছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীকে আরো এক সারি পিছনে এবং প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের আরো কয়েক আসন দূরে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এমনিতে প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পাশেই বসেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বয়স বিবেচনায় এবারের বাজেট অধিবেশনে তিনি যোগ দিচ্ছেন না।

বয়স বিবেচনায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদও এবার অধিবেশনে যোগ দেবেন না বলে সংসদ সচিবালয়ে কথা বলে জানা গেছে।

অধিবেশনের জন্য ‘অত্যাবশ্যকীয়’ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের উপস্থিত না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংসদের মূল ভবনে ঢোকার আগে ‘জীবাণুমক্তকরণ চেম্বারের’ ভেতর দিয়ে সব সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঢুকতে হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।

রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী- এসএসএফের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ অধিবেশনে কাজ করবেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে ইতোমধ্যে। তাতে ৪৩ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

দর্শনার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদ ভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবার। গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদে না গিয়ে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে বাজেট অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাজেট উত্থাপনের পর ১২ ও ১৩ জুন অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। ১৪ এবং ১৫ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে সম্পূরক বাজেট পাস করা হবে।

পরদিন শুরু হবে প্রস্তাবিত সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ ও ১৭ জুন দুইদিন আলোচনা করে ১৮ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকতে পারে।

এরপর ২২ জুন থেকে ২৪ জুন আরও তিন দিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫ জুন থেকে ২৮ জুন চার দিনের বিরতি দেয়া হতে পারে।

২৯ জুন সোমবার বাজেটের উপর সমাপনী আলোচনা হবে। সেদিনই পাস হবে অর্থবিল।

পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট এবং নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে সেদিনই অধিবেশনের সমাপ্তি টানা হতে পারে বলে জানা গেছে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রকাশিত অধিবেশনের ক্যালেন্ডার থেকে।

দীর্ঘদিন ছুটি থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সংসদ সদস্যদের করা প্রশ্নের উত্তর আনা সম্ভব হবে না বলে এবারের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হচ্ছে না।

প্রতিবার অধিবেশনের আগে মেয়াদ ও কার্যক্রম ঠিক করতে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়। তবে গত সপ্তম অধিবেশনের মত এবারও তা হয়নি।

সংবিধানের নিয়ম রক্ষায় গত ১৮ এপ্রিল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশনে বসে জাতীয় সংসদ। যেখানে আইনপ্রণেতাদের বসানো হয় দূরত্ব বজায় রেখে। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৩৫ জন অংশ নেন মাস্ক, গ্লাভস পরে।

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এবারের বাজেট অধিবেশন সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ কার্যদিবস চলতে পারে।

১১ জুন বাজেট পেশের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে ৬ দিন। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে দুই দিন। সব মিলিয়ে বাজেটের উপর ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা আলোচনা হবে।

সংসদের আইন শাখার প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে, চলবে দেড়টা পর্যন্ত।

সচরাচর বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হয়। অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের উপর দুই থেকে চার দিন এবং সাধারণ বাজেট এবং উপর ১২ থেকে ১৫ দিন আলোচনা হয়। বাজেট নিয়ে ৫০ থেকে শুরু করে ৬৫ ঘণ্টা আলোচনার রেকর্ড রয়েছে। ১৯৯৮ সালের বাজেট অধিবেশন চলেছিল ২০ কার্যদিবস।