পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের দায়িত্বে এসপি হারুন

নয় বছর আগে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলার ঘটনায় আলোচনায় এসেছিলেন যে পুলিশ কর্মকর্তা, সেই মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আবার পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের দায়িত্বে এলেন উপ-কমিশনার হিসেবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2020, 12:05 PM
Updated : 9 June 2020, 12:11 PM

নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের সাবেক এসপি হারুনকে গত ১৪ মে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে তেজগাঁওয়ের উপ-কমিশনার করার কথা জানানো হয়।

তেজগাঁওয়ের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারকে লালবাগ বিভাগে এবং লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলামকে ডিএমপি সদরদপ্তরে লজিস্টিকস বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

এছাড়া ডিএমপি সদরদপ্তরের উপ-কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. জিয়াউল আহসান তালুকদারকে পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পিওএম পশ্চিমের দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড ওয়ার্কশপে বদলি করা হয়েছে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের আগে ঢাকা মহানগর পুলিশে ছিলেন।

ডিএমপির অপরাধ বিভাগের লালবাগের উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ও তেজগাঁও বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তেজগাঁওয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালের ৬ জুলাই পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়া তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটুনি দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।

পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।

একই বছরের ২ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে হারুন অর রশীদকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করে সরকার।

নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে টক্করে গিয়ে নতুন নতুন আলোচনার জন্ম দেন।

এই প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে এসপি হারুনের ছবিসহ ব্যানার দেখা যায়, যেখানে তাকে বলিউডি সিনেমার নায়কের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় ‘বাংলার সিংহাম’।

গেল বছরের নভেম্বরের শুরুতে এক ঘটনায় হঠাৎ করেই এসপি হারুনের বদলির আদেশ আসে। নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে তাকে পাঠানো হয় পুলিশ সদর দপ্তরে।

গত ২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি হারুন পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আগের ভোররাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আটকের কথা জানান। তিনি দাবি করেছিলেন, তাদের গাড়ি থেকে ইয়াবা, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ আসে, চাঁদা না পেয়ে শওকত আজিজের স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে ধরে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে গিয়েছিলেন এসপি হারুন।

ইন্টারনেটে এর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ৩ নভেম্বর হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ট্রিনিং রিজার্ভ (টিআর) হিসেবে বদলির আদেশ আসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হবে বলেও ওই সময় জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।