‘কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য বিবেচনা করা হচ্ছে না’

করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এই মহামারী মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্যবিদদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান শাহ মনির হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2020, 04:15 PM
Updated : 6 June 2020, 04:15 PM

শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেম আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মহাপরিচালক ।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয় ‘টেবিল টক’ এর ওপর ভিত্তি করে, তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়।”

শাহ মনির বলেন, “কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য বিবেচনা করা হচ্ছে না। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশকেও মহামারী মোকাবিলায় একটি এক্সিট প্ল্যান করতে হবে। 

পুরো পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও স্বাস্থ্যসেবা সকল প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “কোনো ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করা উচিত নয়, বরং এটিকে আলাদা রাখা উচিত।”

সংলাপের সঞ্চালক সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে কোনো বিকল্প নেই, সেটি বর্তমান মহামারীর ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অথচ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয়েছে।”

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

সরকারের প্রতি তিনি পরামর্শ রেখে বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের জন্য বাজেটে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি ব্যবস্থাপনা সক্ষমতার সম্প্রসারণ করতে হবে।”

তিনি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের দমন করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

সেলিম রায়হান প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের এক হাজার জন্যের জন্য মাথাপিছু হাসপাতালের শয্যা শুন্য দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ শ্রীলঙ্কায় এটি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১ দশমিক ৯ এবং থাইল্যান্ডে ২ দশমিক ১ শতাংশ।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকার জিডিপির মাত্র শুন্য দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় করে। অথচ শ্রীলঙ্কায় এটি ১ দশমিক ৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশে একজনকে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ৭৪ শতাংশ নিজের বহন করতে হয়, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় এটি ৫০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ৩৮ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে এটি মাত্র ১১ শতাংশ।

সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুমানা হক সময় পাওয়ার পরও মহামারী মোকাবেলায় ঠিকমত প্রস্তুতি নেয়া যায়নি দাবি করে বলেন, “মহামারী মোকাবেলা পরিকল্পনায় দেরি হয়েছে এবং এটির ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার অভাব স্পষ্ট।

 

“স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য প্রযুক্তি মূল্যায়ন ইউনিট এবং এলাকাভিত্তিক স্বাস্থ্য চাহিদা মূল্যায়ন দরকার। এই মূল্যায়ন ছাড়া শুধু বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কোনো লাভ হবে না।”

রুমানা হক আরও বলেন, মহামারী মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আরও বেশি নিয়োজিত করতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নয়ন এজেন্ডায় প্রতিষেধকমূলক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুস সবুর বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা দ্রুত আসলেও, সেটি ব্যবহারে দেরি হচ্ছে।”

ব্যবস্থাপনা অদক্ষতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “অসৎ কন্ট্রাকটরদের দমন না করা গেলে স্বাস্থ্য খাতে ক্রয় প্রক্রিয়ার সমস্যা মিটবে না।”

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহিতার অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রায় দ্বিগুণ। ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স বর্তমানে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হালনাগাদ নয়।

“নীতি নির্ধারকরা অবকাঠামো নির্মাণে উৎসাহী হলেও মেডিকেল অবকাঠামো পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য তেমন কিছু করছেন না।”

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি বলেও জানান তিনি।