করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একগুচ্ছ প্রস্তাব ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের

যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস অধিক হারে ছড়িয়েছে সেগুলোকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে কঠোর লকডাউন কার্যকর করাসহ সংকট মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে প্রগতিশীল চিকিৎসক সংগঠনগুলোর জোট ‘ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2020, 01:39 PM
Updated : 5 June 2020, 01:39 PM

‘করোনায় উন্মোচিত ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও জাতীয় বাজেট’ শিরোনামে শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বলেন, “স্বাস্থ্যের সংগ্রাম চিকিৎসকদের একক বিষয় নয়, শুধুমাত্র চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষে তা সম্ভবও নয়।”

তিনি বলেন, “বর্তমান করোনার বৈশ্বিক মহামারী শুধু পুঁজিবাদের আত্মঘাতী প্রবণতার উন্মোচনই ঘটায়নি, তা জনস্বাস্থ্যবিরোধী, অমানবিক ও আগ্রাসী চরিত্রও উন্মোচিত করেছে।”

এজন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর সংস্কারের লক্ষ্যে চিকিৎসক সংগঠনের সাথে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন তিনি।

দাবিগুলো হল-

>> অবিলম্বে কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ইউনিটগুলো রিকুইজিশন করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যার করোনা ইউনিট চালু করতে হবে।

>> একযোগে সারা দেশব্যাপী কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে মানসম্মত র‌্যাপিড টেস্ট কিট জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

>> করোনা রোগী চিকিৎসায় নিয়োজিত সব সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা কর্মীর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনে থাকা ও খাবারের সুব্যবস্থা, যাতায়াতে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে তাদের জন্য মানসম্পন্ন পিপিই নিশ্চিত করতে হবে।

>> সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকার ঘোষিত ঝুঁকি বীমা ও ভাতার ক্ষেত্রে বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাতের কারও মৃত্যু হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

>> এলাকাভিত্তিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত করে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকৃত রোগীদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

>> কোভিড-১৯ অত্যধিক আক্রান্ত এলাকাগুলোকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে লকডাউন আরও দৃঢ়ভাবে (সংক্রমণ কমা শুরু না হওয়া পর্যন্ত) চালু রাখতে হবে। লকডাউন চালু রাখার সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও চিকিৎসা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

>> টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জসহ সব শিল্পাঞ্চলে অবিলম্বে কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে, শিল্পশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে ‘ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ’।

>> স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।

>> অনুৎপাদনশীল খাতে বাজেট বরাদ্দ হ্রাস করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ খাতে বাজেটের এক তৃতীয়াংশ বরাদ্দ করতে হবে।

>> সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক থেকে বিশেষায়িত পর্যন্ত সব চিকিৎসা বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে।

>> সরকারি হাসপাতালে ইউজার ফি বাতিল করতে হবে। এ পর্যন্ত আদায়কৃত ইউজার ফি হাসপাতাল উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে।

>> সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে ৫০ শয্যা ও জেলা পর্যায়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে হবে। প্রতি ১০ হাজার জনগণের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাব অনুযায়ী) আনুপাতিক হারে কমপক্ষে ২৩ জনে উন্নীত করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

>> ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রী নিয়োগ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংস্থান করতে হবে।

>> জনগণের জন্য সার্বজনীন জাতীয় স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে।

>> নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সুপেয় পানি, মানসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যকর আবাসন নিশ্চিত করতে হবে।

>> জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে প্রাধান্য দিয়ে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

>> শিল্পোন্নয়ন, নগরায়ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহনের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা বন্ধ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের আহ্বায়ক বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুবের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ ও ডা. ফয়জুল হাকিম লালা কথা বলেন।

এছাড়া ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক ডা. চন্দন কান্তি দাস, অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম, ডা. হারুন-অর রশিদ, অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, ডা. এম এইচ ফারুকী, ডা. গোলাম রব্বানী, ডা. এস এম ফরিদুজ্জামান ও ডা. মনীষা চক্রবর্তী অংশ নেন।