সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনের প্রয়োগ চায় টিআইবি

বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের সুরক্ষায় সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতার কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2020, 01:38 PM
Updated : 4 June 2020, 01:38 PM

বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, “জীববৈচিত্র্যের অমূল্য আধার সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন তথা সার্বিকভাবে প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যেই শুক্রবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হবে বিশ্বে। আন্তর্জাতিক এই দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘জীববৈচিত্র্য’।

২০১৮ সালের এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্সে (ইপিআই) বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যে ১৭৯তম, সে কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে টিআইবির বিবৃতিতে।

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন “বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে তেমনি পরিবেশ দূষণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।… বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে; বন ও জলাশয় দখল বেড়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রামাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে; এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।”

পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ‘সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাব-নির্ভর সিদ্ধান্ত, দুর্বল তদারকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাকে’ ঝুঁকির কারণ বলে মনে করে টিআইবি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে টিআইবি বলছে, ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০টি প্রজাতির অস্তিত্ব ‘মারাত্মক সঙ্কটে’ রয়েছে- যা বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য ‘অশনিসংকেত’ বলে মনে করছে টিআইবি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে ‘স্থায়ীভাবে ঝুঁকির মধ্যে’ ফেলা হয়েছে।

“অথচ সুন্দরবন যেমন সমৃদ্ধ জীবজগতকে ধারণ করে প্রাণ ও প্রকৃতির রসদ যোগাচ্ছে, তেমনি সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ফণীসহ সর্বশেষ আম্পানের তাণ্ডব হতে উপকূলের অজস্র মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা প্রদান করেছে। আমাদের একটাই সুন্দরবন, এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।”

সুন্দরবনসহ অন্যান্য পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মাণাধীন সকল শিল্প ও কারখানা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।