নামের মিলে ‘ভুল লোক’ গ্রেপ্তার, দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ হাই কোর্টের

নামের মিল থাকায় ‘ভুল করে’ মূল আসামির পরিবর্তে মাদক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 12:35 PM
Updated : 3 June 2020, 02:30 PM

পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নজরে আনা হলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।

‘এক রুবেলের বদলে জেলে আরেক রুবেল’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন হাই কোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনিই শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

পরে শিশির মনির বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি আমলে নিয়ে বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাই কোর্ট। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা হাই কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর জানাতে বলেছেন।”

হাই কোর্ট ‘ভুল করে গ্রেপ্তার’ ওই ব্যক্তির মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে বলে আগে জানালেও পরে তা সংশোধন করে নেন এই আইনজীবী।

যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর সেতুর কাছ থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদমতলা গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে রুবেল আলী ওরফে রুবেল বাবুলকে (২৬)।

ওইদিনই পুলিশ রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে করে এবং সেই মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৫ দিন পর রুবেল জামিনে মুক্তি পান এবং তিন দফা আদালতে হাজিরাও দেন। পরে হঠাৎ তিনি উধাও হয়ে যান।

ওই বছর ১০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বাবুল ইসলাম আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুবেল বাবুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরোয়ানাটি দীর্ঘদিন শিবগঞ্জ থানায় পড়ে থাকার পর গত ১০ মার্চ রাতে জামাইপাড়া গ্রামের মো. মন্টুর ছেলে মো. রুবেলকে (২৩) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামের নাম আলাদা হলেও আসামি ও তার বাবার নামের মিল থাকায় ‘একজন নিরপরাধ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে’ আড়াই মাস ধরে জেল খাটতে হচ্ছে।

গ্রেপ্তার রুবেলের বাবা মো. মন্টু এবং এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে যুগান্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে দুই পা ভেঙে যায় রুবেলের। দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখন কিছুটা হাঁটতে পারলেও তার বাঁ পায়ে চলৎশক্তি নেই।

এ অবস্থায় রুবেল জামাইপাড়ায় পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের গ্রামের বাড়ি দেখাশোনার কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অন্যদিকে মামলার মূল আসামি রুবেল আলী বছরখানেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

মূল আসামির বাবা মন্টু আলীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রুবেল কোথায় গেছেন, তা তারা জানেন না।

পরে যুগান্তরের প্রতিবেদক মূল আসামির সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় জানিয়ে রুবেল আলীকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “আমাকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল ধরেছিল শিবগঞ্জ থানার এক কনস্টেবল। পরে এসআই আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়।

“মামলা হালকা করার জন্য সোনা মিয়া নামের একজন দালালের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেয় পুলিশ। পরে ওই সোনা মিয়াই উকিল ধরে আমার জামিন করান। আমাকে বলা হয়েছিল মামলাটি আর নেই। এর পর আর খোঁজ করিনি।”

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তরিকুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার মো. রুবেল স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না।

“তাকে গ্রেপ্তার করার দিন আমরা বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানাজানি হয় যে, এই রুবেল আসল রুবেল নয়। শুধু নিজের আর বাবার নামের মিল থাকায় পুলিশ নির্দোষ রুবেলকে গ্রেপ্তার করেছে। সঠিকভাবে যাচাই করলে এই ভুল হতো না।”

শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহকে উদ্ধৃত করে যুগান্তর লিখেছে, “মনে হচ্ছে গ্রেপ্তারের সময় তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। এখন নিশ্চিত হয়েছি আপনারা জানানোর পর। কীভাবে নির্দোষ রুবেলকে বের করা যায় আমরা সেটা ভেবে দেখছি।”