আবরার হত্যা মামলায় বুয়েটছাত্র জিয়নের জামিন হয়নি

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মেফতাহুল ইসলাম জিয়নের জামিন আবেদন নাকচ করেছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 11:00 AM
Updated : 2 June 2020, 01:01 PM

মঙ্গলবার ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির অন্যতম জিয়নের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। অন্যদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন এ ট্রাইবুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা।

ফারুক আহাম্মদ শুনানিতে বলেন, “জিয়ন মারধরে অংশ নেয়নি, তার নাম ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কোনো আসামিই বলেনি।

“তাছাড়া কাশিমপুর কারাগারের একজন কারারক্ষী করেনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সেখানে আসামি খুব অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছেন। তাকে জামিন দেওয়া হোক।”

এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিরাপত্তারক্ষী মোস্তফা ঘটনার সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দিতে বলেছেন, মারধরের পর যারা আবরারকে বাইরে এনে রেখেছিল, তাদের মধ্যে জিয়ন একজন।

“সুতরাং ঘটনার সঙ্গে জিয়ন জড়িত ছিল। মামলার বিচার শুরুর আগেই এ অবস্থায় তার জামিন হয়ে গেলে সাক্ষীদের সে টেম্পার করবে। সুতরাং তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হোক।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী তার কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের চেম্বারে বসে এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার গ্রামের বাড়ি থেকে শুনানিতে অংশ নেন।

গত ৬ এপ্রিল এ ট্রাইব্যুনালে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি।

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

পরদিন আবরারের বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে।

পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে।

অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ১৮ নভেম্বর পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তাদের মধ্যে একজন পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি হলেন-বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, বহিষ্কৃত সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, ইসতিয়াক হাসান মুন্না, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির ও আকাশ হোসেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ ও মোয়াজ আবু হোরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, এস এম মাহমুদ সেতু, এজাহারের বাইরের ছয় আসামি হলেন-বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, মাহামুদ সেতু ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম।

পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন- ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মাহমুদুল জিসান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের মুজতবা রাফিদ।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।