লিবিয়ায় নিহতদের অন্তত দুইজনকে পাচার করেছিলেন হাজী কামাল: র‌্যাব

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে র‌্যাব ঢাকায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি নিহতদের মধ্যে অন্তত দুইজনকে ‘পাচার করেছিলেন’ বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2020, 02:04 PM
Updated : 1 June 2020, 02:04 PM

র‌্যাব-৩ এর উপ অধিনায়ক মেজর রাহাত হারুণ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লিবিয়া থেকে তথ্য পাওয়ার পর সোমবার ভোরে ঢাকার শাহজাদপুর থেকে কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“কামাল মূলত টাইলসের ঠিকাদারিতে জড়িত। সেই সূত্রে বহু শ্রমিকের সাথে তার যোগাযোগ। ওই শ্রমিকদের ইউরোপে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে সে টাকা নিয়ে পাচার করে দিত। এভাবে সে অন্তত চারশ মানুষকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছে।”

গত ২৮ মে লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে একদল মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনরা। ওই ঘটনায় চার আফ্রিকান অভিবাসীও নিহত হন।

এরপর নিহতদের আত্মীয়স্বজন মাদারীপুর সদর ও রাজৈর থানায় তিনটি এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় একটি মামলা করেন স্থানীয় ‘দালালদের’ বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা লিবিয়ার একটি ‘সূত্র’ থেকে জানতে পারেন, হাজী কামাল নামে ঢাকার এক লোক নিয়মিত অবৈধভাবে লিবিয়ায় লোক পাঠায়।

ওই তথ্যের ভিত্তিতেই সোমবার ভোরে শাহজাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কামালকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা হারুণ বলেন, “লিবিয়ায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত দুজনকে পাঠিয়েছেন এই হাজী কামাল।”

গ্রেপ্তার করার সময় কামালের কাছ থেকে বেশ কিছু পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে হারুণ বলেন, “তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। প্রায় ১০ বছর ধরে সে মানবপাচারে জড়িত।”

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, মানবপাচারের এই পুরো প্রক্রিয়া চলে একটি ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে, যেখানে কামাল একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি।

এই `সিন্ডিকেটের’ সদস্যরা প্রথমে লোক বাছাই করে সাত-আট লাখ টাকায় চুক্তি করত। সব ঠিক থাকলে তাদের কলকাতা হয়ে মুম্বাই, তারপর সেখান থেকে দুবাই ও মিশর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যেতে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে পাচারের চেষ্টা করা হত।

মেজর রাহাত হারুণ খান বলেন, দীর্ঘ এই পথে একেক জায়গার দায়িত্বে থাকেন পাচারকারীদের কয়েকজন এজেন্ট। 

“দুবাই নেওয়ার পর সেখানকার একজন নির্দিষ্ট এজেন্ট পরবর্তী ধাপগুলো শেষ করে। লিবিয়ার নেওয়ার পর এই লোকগুলোকে জিম্মি করে বাংলাদেশে তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোন করে আরও টাকা আদায় করা হয়। সেজন্য প্রয়োজনে নির্যাতনও করে।

“পরে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে ইউরোপে পাঠানো হয়। এরমধ্যে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন, মারা যান।”

হাজী কামালের ওই চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে বলে মেজন হারুণ জানান।

আরও পড়ুন: