একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তার অফিসে থাকায় মানা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে লকডাউন তুলে অফিস খুলে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকারি দপ্তরগুলোতে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে অবস্থান করতে নিষেধ করা হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2020, 09:05 AM
Updated : 1 June 2020, 11:48 AM

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্মকর্তারা যেন কোনোভাবেই সংক্রমিত না হন, সেটি আমাদের প্রথম লক্ষ্য। সেজন্য ন্যূনতম সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় কাজগুলো করব।

“সেজন্য আমরা চাই একসাথে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা কখনোই অফিসে থাকবেন না। ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা ঘরে বসে ভার্চুয়ালি অফিস করতে পারবেন। তার মানে হল একসঙ্গে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সব সময়ই কানেকটেড থাকছেন।”

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর রোববার থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহনও চলাচালের অনুমতি দিয়েছে সরকার।

এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা।

রোববার প্রথম দিন অফিসে এসে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে কিছুটা ভয় নিয়েই তারা অফিস করছেন। তবে সবাইকেই অফিসে আসতে হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা তখন ছিল না।

রবি ও সোমবার দুই দিনের সীমিত পরিসরের অফিস করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফরহাদ বলেন, অনেক কর্মকর্তা ‘অযথাই’ অফিসে চলে আসছেন। সেক্ষেত্রে সবার জন্যই ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

“মহামারী চলছে, যথষ্ট সতকর্তা অবলম্বন করে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা চাই না কোনো কর্মকর্তা অপ্রয়োজনে অফিসে আসুক। কর্মকর্তাদের সুরক্ষার জন্য আমরা এই ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি। একসাথে আমরা ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মস্থলে রাখতে চাচ্ছি না। যারা অসুস্থ তারা একেবারেই অফিসে আসবেন না।”

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সকাল ৯টায় অফিসে এসে কেউ যদি দুই ঘণ্টায় কাজ শেষ করতে পারেন, তাহলে কাজ শেষেই তিনি চলে যাবেন। বিকাল ৫টায় অফিস ছুটির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে না। কেউ বেলা ১১টায় অফিস থেকে চলে গেলে ওই দপ্তরে তার জায়গায় অন্য কেউ অফিসে আসতে পাববেন।

অফিসে কোনো কারণে যদি ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তার উপস্থিতির প্রয়োজন হয়, তাহলে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

“যদি আরও বেশি কর্মকর্তার অফিসে উপস্থিতির প্রয়োজন হয়, তাহলে সকাল ৯টায় যারা অফিসে আসবেন তারা কাজ শেষে চলে যাওয়ার পর অন্যরা অফিসে আসতে পারবেন।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকা বাধ্যতামূলক নয় জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন আমরা এটাকে আর ম্যান্ডেটরি রাখছি না। কারণ এখন তো অত কাজ নেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় জরুরি কাজগুলোই এখন করা হবে। আমরা আস্তে আস্তে ওপেন হচ্ছি।

তিনি জানান, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কে কোন সময় অফিস করবেন তা ওই দপ্তর থেকেই ঠিক করে দেওয়া হবে, কারণ প্রত্যেক ডেস্কেই ৪-৫ জন করে কর্মকর্তা আছেন।

ফরহাদ জানান, রোববার প্রথম দিন অফিস করার পর কোনো মন্ত্রণালয় বা সরকারি দপ্তর থেকে কোনো সমস্যার কথা জানানো হয়নি।

“তবে কেউ কেউ অপ্রয়োজনে চলে এসেছে। ট্রায়াল অ্যান্ড এরর প্র্যাকটিস হচ্ছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে আমরা একটি আদর্শ জায়গায় নিয়ে যাব। এটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত আকারে হবে।

“আমরা চাই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন আক্রান্ত না হন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

ফরহাদ বলেন, অসুস্থরা চাইলে এই সময় বাসায় থেকে অফিস করতে পারবেন। এর বাইরে প্রয়োজন হলে ভার্চুয়াল অফিস সবাই করতে পারবেন। এখন সবাইকে ই-ফাইলিংয়ে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে।

৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে বহাল থাকা যায় বলে এই বয়সীদের খুব বেশি বয়স্ক হিসেবে দেখছেন না জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। ফলে কোন বয়সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসবেন না সে বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না।

স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ‘আউটসোর্সিংয়ে’ নিয়োগ পাওয়া বেশ কিছু বয়স্ক নাগরিক কাজ করেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, সচিবালয়ের লিফটম্যানদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কাজ দেওয়া হয়। সেখানে অনেক বয়স্ক মানুষ কাজ করছেন। আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ এবং কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানেও আউটসোর্সিংয়ে বয়স্কদের কাজ দেওয়া হয়। এখন তাদের অফিসে আসার প্রয়োজন নেই।

তবে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিসে অবস্থান না করার বিষয়টি এখনই লিখিত আদেশ আকারে দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ সচিবরে নেতৃত্বে সভা হচ্ছে, একটা নির্দেশনা সবাইকে দেওয়া হবে। এখন আমরা বলছি, অফিসে ফিজিক্যাল প্রেজেন্সটা যেন ২৫ পারসেন্ট ক্রস না করে।

“দুই ঘণ্টায় যদি ১০ শতাংশ কাজও শেষ হয়, তারা বাসায় চলে যাবেন, এরপর অন্যরা অফিসে আসবেন।”