রোববার ঢাকার সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চগুলোতে দেখা যায় আগের মতোই ঠাসাঠাসি-গাদাগাদি। আর ঢাকায় ফেরা লঞ্চগুলো থেকে যাত্রীরা নামছিলেনও হুড়োহুড়ি করে।
দুপুরে সদরঘাটে পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ বা মালিকদের মধ্যে যদি উদাসীনতা দেখা যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডিব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির মানার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দেশে সংক্রমণের মাত্রা যখন বাড়ছে, তখন মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও সমালোচনার মধ্যেই ‘মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে’ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার বিকল্প নেই এমন যুক্তি তুলে ধরে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে মহামারীর মধ্যে গণপরিবহণে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৩ দফা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
রোববার নৌ চলাচল শুরুর পর সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৬৭টি লঞ্চ ছেড়ে যায়; আর সদরঘাটে আসে ১৩টি লঞ্চ।
সকাল পৌনে ৭টার দিকে প্রথম যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সোনারতরী চাঁদপুরের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে যায়।
ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সদরঘাটের আটটি প্রবেশপথে জীবাণুমুক্তকরণ টানেল বসানো হয়েছে; হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সব নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “লঞ্চের ডেকে কোন যাত্রী কোথায় অবস্থান করবে, তাও চিহ্নিত করা হয়েছে।”
শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব উধাও হয়ে যায়।
ডেকে চিহ্ন একেঁ দেওয়া হয়েছে কে কোথায় বসবে; কিন্তু যাত্রীরা এসে আগের মতোই চাদর বিছিয়ে বসে পড়েন। যেখানে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব রাখার কথা, সেখানে এক ফুটও ফাঁক নেই।
এমভি ফারহান-৩ এক যাত্রীর কাছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি তিনি। অথচ লঞ্চটিতে যাত্রীদের চাপ তেমন ছিল না।
এমভি টিপু কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের কোম্পানির চারটি লঞ্চ সদরঘাট থেকে বরিশাল, হাতিয়া, বেতুয়া ও ঝালকাঠি ছেড়ে গেছে। যাত্রীদের তেমন চাপ ছিল না। কিন্তু যাত্রীরা ফাঁক ফাঁক হয়ে বসছে না। স্টাফরা স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললে বিরক্ত বোধ করেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে সদরঘাটে রাতে দায়িত্ব পালনকারী বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, “রাতে লঞ্চে তেমন যাত্রী নেই বলেই চলে। দুজন যাত্রী, তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।”
চাঁদপুরগামী মিতালী-৪ লঞ্চের মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “লঞ্চে সাড়ে তিনশ যাত্রী হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাঁড়াতে ও চলাচল করতে বলা হয়।”
ওই লঞ্চের যাত্রী মাহমুদুল হাসান বলেন, “অল্প কিছু যাত্রী, কিন্তু লঞ্চে উঠার সময়ও হুড়োহুড়ি, আবার সিঁড়ি দিয়ে যাতায়াত করতেও দেখা যায় গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে সবাই চলাচল করছে।”
এতে শঙ্কা প্রকাশ করে একটি বেসরকার হাসপাতালের চাকরীজীবী হাসান বলেন, “এভাবে যাতায়াত করলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন আরও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “সকালে একবার লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু যাত্রীর চাপ আর স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না দেখে ফিরে যাই। রাতে যাত্রীর চাপ নেই, কিন্তু যে কয়জন আছে তাদের মধ্যেও তো উদাসীনতা দেখছি।”
এতদিন পর লঞ্চ চলাচলে প্রথম দিন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিআইডব্লিওটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানানো হয়েছে, কিন্তু ঢাকায় যেসব লঞ্চ এসেছে সেসব লঞ্চে মানুষ গাদাগাদি ছিল।
“বরিশাল ও অন্যান্য রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো সোমবার ভোরে সদরঘাটে আসলে বোঝা যাবে কত যাত্রী নিয়ে এসেছেন তারা। বেশি যাত্রী হলেও আর স্বাস্থ্যবির বালাই আর থাকে না।”