ঢাবিতে বন্ধ হচ্ছে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সোমবার থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 06:00 PM
Updated : 31 May 2020, 06:01 PM

ল্যাব পরিচালনায় আর্থিক সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরু হওয়া, গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি একাডেমিক কাজে ব্যবহারসহ কয়েকটি কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে গত ৫ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস) ভবনের ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটি।গবেষণাগারে দুটি পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন প্রায় চারশ নমুনা পরীক্ষা করা হত।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া কিট, পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক খরচে চলত এই নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম। কিন্তু রোববার থেকে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরু হওয়ায় নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত ২৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি বন্ধ করে দিচ্ছি। আর্থিক কারণে নয়, আমাদের আগে থেকেই কথা ছিল ৩১ মে পর্যন্ত আমরা এটা চালিয়ে যাব।”

তিনি বলেন, “আমাদের তো এটা হাসপাতাল নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সময় দিতে হবে।ল্যাবের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আমাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো এখন সেখানে গবেষণার কাজে প্রয়োজন হচ্ছে। সেগুলো এখন জীবাণুমুক্ত করে আবার সেখানে স্থাপন করতে হবে। মূলত এজন্য করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কাজটা আর করা হচ্ছে না।"

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ল্যাবটিতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১২ জন শিক্ষক ও ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী কাজ করছিলেন। শিক্ষকরা স্বেচ্ছায় কাজ করলেও প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।

খরচের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হলেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক শরীফ আখতারুজ্জামান।

“কয়েকটি কারণে আমরা আর করোনাভাইরাস স্যাম্পল টেস্ট করব না। আগামীকাল (সোমবার) আমরা এই কার্যক্রম বন্ধ করে দেব। ল্যাব পরিচালনা করতে প্রতিমাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে, যা বহন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কঠিন এবং বাড়তি চাপ।

“তাছাড়া যারা কাজ করছে, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। ভলান্টিয়ারদের অন্তত কিছু প্রণোদনা দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েও কোনো সাড়া পাইনি।”

গত ৫ মে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস ভবনে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমের  উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এখন তো অফিস-আদালত খুলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। এটা তো আর হাসপাতাল নয়, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের যতটুকু সম্ভব হয়েছে, সরকারকে ততটুকু সহযোগিতা করেছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বেচ্ছায় এ দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। আর্থিক সহায়তার কোনো কথা ছিল না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে করোনাভাইরাস টেস্ট করছে, তাদের কারও জন্যই সরকারের পক্ষ কোনো বরাদ্দ নেই। আমরা তাদেরকে শুধু পিপিই, কিট ও স্যাম্পল সরবরাহ করেছি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর টেস্ট না করাতে চাইলে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।”

করোনাভাইরাস সংকটে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত করোনাভাইরাস রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি গত ২৯ মার্চ  স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তিনটি প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি দেয়। এতে স্বল্প খরচে আরটিপিসিআর কিট তৈরির সক্ষমতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্রায় এক মাস পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পেয়ে ৫ মে থেকে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।এরই মধ্যে জীববিজ্ঞান অনুষদের একদল গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে স্থাপিত কোভিড-১৯ গবেষণাগার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঁচটি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন বলে দাবি করেন।প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আরও ১০০টি ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হবে বলেও জানান তারা।