টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে রোববার সীমিত পরিসরে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহনও চালুর অনুমতি দিয়েছিল সরকার।
তবে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা গাড়ি মেরামতের সঙ্গে বিশেষ এই পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর জন্য ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সুরাহার পরেই চাকা ঘোরাতে চাইছেন মালিকরা।
শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মালিকদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। বাস-মিনিবাস ১ জুন থেকে চলাচল করবে।”
একদিন পর থেকে বাস চালানোর কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতদিন গাড়িগুলো বন্ধ ছিল, চলে নাই। অনেক গাড়িতে দেখা গেছে ব্যাটারি নাই। ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে, ইলেকট্রিক সমস্যা আছে অনেক গাড়ির। এসব ঠিক করতে সময়ের ব্যাপার আছে। এজন্য আমরা ১ তারিখ থেকে গাড়ি চালানোর জন্য অনুরোধ করেছি।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিআরটিএর বৈঠকে বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা কাল মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের ব্যাপার আছে। কাগজপত্র না থাকলে আমরা তো বাড়তি ভাড়া নিতে পারব না। যাত্রীদের সঙ্গে একটা ঝামেলা হবে। এ কারণে কাল অনুমোদন আসার পর পরশু দিন থেকে আমরা গাড়ি চালাব।”
রোববার রাতে কিছু গাড়ি চলতে পারে জানিয়ে রমেশ চন্দ্র বলেন, “কিছু গাড়ি লকডাউনের কারণে আটকে গেছে। যেমন আমার অনেক গাড়ি ঢাকার বাইরে আছে। রোববার রাতে সেগুলো ঢাকায় আসবে। মেরামতের কিছু ব্যাপার আছে। এ রকম অনেক মালিকের গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে। কাল সেগুলো তাদের গ্যারেজ যেখানে সেখানে যাবে।”
সোমবার গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
মালিক-শ্রমিকদের স্বস্তি
এদিকে বাস-মিনিবাস চালুর ঘোষণায় স্বস্তি এসেছে পরিবহন মালিক- শ্রমিকদের মধ্যে।
বাস চালু হবে শুনে খুশি গাবতলী থেকে দূরপাল্লার রুটের একটি বাসের চালক সাইফুল ইসলাম।
তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জীবন তো বাঁচাতে হবে। এই করোনার জন্য আর কয়দিন ঘরে বইসা থাকব? এতদিন ধইরা কাজকাম বন্ধ, কেউ তো একটা পয়সা দেয় নাই। রাস্তায় বাইর হইলে করোনায় মারা যাওনের ভয় আছে, কিন্তু পরিবার লইয়া না খাইয়া মরার চেয়ে ওইটা ভালো।”
ঢাকার খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. হারুনুর রশিদ মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটের একটি পরিবহনের বাস চালান। এবার অর্থকষ্ট কিছুটা দূর হবে বলে আশা করছেন তিনি।
হারুন বলেন, “আর্থিক কষ্ট করেছি অনেক দিন। এবার হয়ত ঠিক হবে। আমাদের স্বস্তি অবশ্য নির্ভর করছে যাত্রীরা কেমন আচরণ করে। কারণ ভাড়া নিয়া যাত্রীরা ঝামেলা করতে পারে। যাত্রীদের অনুরোধ করি তারা যেন বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেন। ৪০ জনের জায়গায় ২০ জন নিয়া গেলে বাড়তি ভাড়া দিতেই হবে।”
ঢাকার মতিঝিল থেকে গাজীপুর রুটের একটি বাসের মালিক আবদুস সালাম শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা ‘দুর্বিষহ’ জীবনযাপন করছিলেন। আশা করছেন এবার তার শেষ হবে।
“ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে কারোরই তো ভালো লাগে না। আমাদের অনেকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছে। গাড়ি চালু হয়েছে। আমরা চাই সরকার আমাদের জন্য একটা যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দিক। করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে তা আবার কমিয়ে দিক। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আগের ভাড়ায় গাড়ি চললে মালিকরা কিস্তি দিতে পারবে না। দুই মাসে তো সবারই অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে।”
মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সোমবার থেকে গাড়ি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সড়কে যাত্রী কম থাকতে পারে এই ভাবনা থেকে সব বাস একসঙ্গে না চালিয়ে পালা করে চালাবেন।
“আমরা লাভবান না হলেও দেশের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে আমরা মেনে নিচ্ছি। শ্রমিকরা এই কয়েকটা দিন অনেক কষ্ট করেছে। তারা তো দিন আনে দিন খায়, গাড়ি চললে তাদের মজুরিটা তারা ঠিকমতো পাবে। তাদের জন্য অনেক উপকার হল। আমরা রোস্টার করে গাড়ি চালাব- যেন সব মালিকের গাড়ি চলে, সব শ্রমিকরা যেন কাজ করতে পারে।”
“স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য হচ্ছে, ‘আপনারা ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন’। ঘরে থাকার কথা বললে লোকজন তো বাসার বাইরে বের হবে না। আমরা তো যাত্রী পাব না। তারপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালু করব। আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।”
বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়া নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে দুই মাসের মতো ‘লকডাউন’ রাখার পর রোববার থেকে আবার সব চালু হচ্ছে।
তবে এমন এক সময়ে সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে যখন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও এতে মৃত্যু ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারীতে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৬০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, আর মারা গেছেন ৬১০ জন।