সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসে বাধা মানসিকতা: শিক্ষামন্ত্রী

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্পূর্ণ অনলাইন ক্লাস শুরু না করার পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে বড় বাধা মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2020, 06:51 PM
Updated : 29 May 2020, 06:51 PM

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে কোনো বিভাগের বা শিক্ষকের উদ্যোগ যেখানে আছে, তারা কিন্তু অনেকটা এগিয়ে নিতে পারছেন।

“আর অন্যরা যারা এখনও পিছিয়ে আছেন, শুরুই করেননি, আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, আমাদের মাইন্ডসেট সেখানে প্রথম বাধা।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছি, নেহাত কম দিন কিন্তু হয়নি। ব্যাপক হারে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে সরকারি- বেসরকারি সবক্ষেত্রে।

“কিন্তু আমাদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ডিজিটালাইজেশন, বিশেষ করে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন ছিল, সেই ডিজিটালাইজেশন যে হয়নি। তার থেকে বড় কথা আমাদের মাইন্ডসেটটা কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। আমি সেখানে দেখছি, সব থেকে বড় বাধা।”

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ না থাকলেও তারা সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, “আমাদের চিন্তার জগতে, আমাদের পরিকল্পনায় বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। যে পরিবর্তনটা হয়ত আমরা কয়েক বছর পরে গিয়ে ভাবতাম। সে পরিবর্তনটি এখন এই সংকটের কারণে অনেক এগিয়ে এসেছে। এখনই সেই পরিবর্তনটির সঙ্গে খাপ-খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে।”

নতুন বাস্তবতাকে ধরে নিয়ে এগোনোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কি বলব, আমাদের অনলাইনে সমস্যা, সেহেতু আমরা অনলাইনে যাব না? তাহলে আমাদের এই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে কতগুলো দিন, কতগুলো মাস ঝরে যেতে দিব? সেটা আমাদের জন্য কোনো অপশন? আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ল্যাপটপ বা ট্যাব যদি না থাকে, আজকাল দেশেই স্মার্টফোন তৈরি হয়, দামও কম। সেটাও অনেক শিক্ষার্থীর কাছে, কারও কারও কাছে সেটার মূল্যও অনেক হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধাটা দিতে পারি কি না। সারা বিশ্বে স্টুডেন্ট লোনের ব্যবস্থা আছে, আমরা আমাদের এখানে সেটা নিয়ে ব্যবস্থা করিনি বলে সেটা নিয়ে এখনও চিন্তা করব না, তা তো হতে পারে না।

“বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের ডেটাপ্যাক কিনে দিচ্ছে। শুধু প্রাইভেট নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আজকে যদি আমরা বলি, আমি অনলাইনে পড়াতে পারি না, এটা গ্রহণযোগ্য না। আজকে যদি আমি বলি, আমার অ্যাক্সেস নাই, তাহলে এটা গ্রহণযোগ্য না। আমার বলতে হবে, কার অ্যাক্সেস নেই, কতদিনের মধ্যে অ্যাক্সেস দেওয়া যায়, কেন অ্যাক্সেস নেই, কোথায় সমস্যা, কীভাবে আমরা সেই সমস্যা সমাধান করতে পারি।”

বিশ্বব্যাপী নতুন করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান চালু করার উপায় খুঁজতে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “আমরা আমাদের জরিপে দেখেছি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬ বিভাগের ৬০ ভাগ আগ্রহী অনলাইনে পড়াশোনা করতে। ৪০ ভাগ নানা ধরনের সমস্যার কথা বলছেন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যন্ত্রপাতি ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার বিষয় চলে আসবে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ইকুইপড কি না, সেটা দেখতে হবে।”

ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যায়নের দিকটিও ভাবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “কেবল ক্লাস নিব, নাকি পরীক্ষাও নিব। পরীক্ষা নিলে সেটা কীভাবে হবে এবং সার্টিফিকেট কেমন করে দিব, সেসব প্রশ্ন আসবে। প্যারাডাইম শিফট কীভাবে হচ্ছে সেটাও আমাদের দেখতে হবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “একটা জিনিস স্পষ্ট, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীদের আসতে বলতে পারব না। ক্লাস শুরু করার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অ্যাকসেস সামর্থ্যের বিষয় দেখতে হবে। শিক্ষার্থীদের অভিগম্যতা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কী করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “মুখোমুখি পড়ানো আর অনলাইনে পড়ানোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে। সিলেবাসটাও রিডিজাইনের প্রশ্ন আসবে।”

অনলাইনে পাঠদান চালুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক নাসরীন বলেন, “যাদের প্র্যাকটিক্যাল বিষয় নেই তাদেরটা এক রকম, যাদের ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক আছে, তাদেরটা এক রকম। সায়েন্স ফ্যাকাল্টি বলেছে, এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে অনলাইনে যাওয়া সম্ভব না।”

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক দেলাওয়ার হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক তানিয়া হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আইনুল ইসলাম ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দেবাশীষ কুন্ডু আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে মিডিয়া পার্টনার ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।