ওই রোগী এখন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং তার অক্সিজেন লাগছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে ঢাকার সব হাসপাতাল ঘুরেও তার জন্য একটি আইসিইউ বেড না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্ত্রী।
দুই দিন আগেই ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের এই হাসপাতালের নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এই হাসপাতালে ভর্তি হন রাজধানীর কুড়িল চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা সুলতান মিয়া।
তিনি শুক্রবার রাতে মোবাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে তার জ্বর আসে। জ্বর না কমা এবং সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় বুধবার ইউনাইটেড হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হলে বৃহস্পতিবার এখানে ভর্তি হন তিনি। তাকে ‘অবজারভেশন ওয়ার্ডে’ রাখা হয়েছে।
সুলতান মিয়া বলেন, “আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আমাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দেওয়া হচ্ছে।
“এখানে মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে আছি। মাস্ক খুললেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ অবস্থায় আমাকে চলে যেতে বলছে। আমি কোথায় যাব? অক্সিজেন লাগানো থাকলে কিছুটা ভালো বোধ করি।”
সুলতান মিয়ার স্ত্রী ফারহানা তাবাসসুম অভিযোগ করেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে তাকে ‘কিছুক্ষণ পরপর ফোন দেওয়া হচ্ছে’ রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দিনভর ঢাকার সবগুলো হাসপাতাল ঘুরেও তিনি আইসিইউর ব্যবস্থা করতে পারেননি।
“একটু পরপর ফোন দিচ্ছে। বলছে আপনাদের রোগী নিয়ে যান। আমরা রাখতে পারব না। ওরা বলেছে, কোনো রিস্ক নিতে পারবে না। এই বিপদের মধ্যে আমি কোথায় যাব? সে একটা মুহূর্ত অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারে না। দিনভর স্কয়ার, অ্যাপোলা, ঢাকা মেডিকেল, কুয়েত মৈত্রী, কুর্মিটোলা, রিজেন্ট, মুগদা হাসপাতাল সবখানে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও আইসিইউ পাইনি। করোনা রোগী শুনলেই চিকিৎসকরা রাখতে রাজি হয় না।”
তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ার বলেন, সাধারণ সময়েই তাদের আইসিউতে রোগীর চাপ বেশি থাকে। এখন আরও বেশি।
“আমাদের আইসিইউ বেডও সীমিত। একটা বেডও খালি নেই। তাই যাদের আইসিইউ বেড প্রয়োজন হচ্ছে তাদের বলছি, যে কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ফ্যাসিলিটি থাকলে শিফট করতে। অন্য হাসপাতালগুলোরও তো একই অবস্থা। রোগীদের স্বজনদের বলছি, অন্য জায়গায় যদি ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে সেখানে নিয়ে যেতে।”
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল একজন মুমূর্ষু রোগীর লাইফ সাপোর্ট খুলে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জিয়া হায়দার অভিযোগ করেছিলেন, কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর তার মায়ের ক্ষেত্রে এই কাজটি করেছে বেসরকারি এই হাসপাতাল। পরে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জিয়ার মাকে। গত ২৩ এপ্রিল সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
এদিকে এপ্রিলেই ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ পাঁচজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়লে তা গোপন করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই হাসপাতালেরই অন্তত দুজন চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এ অভিযোগ করেছিলেন।
বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান পাঁচজন রোগী।
অগ্নিকাণ্ডের পরদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগ করেন, হাসপাতালের ওই অংশে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল ‘অপ্রতুল’।
পরে ফায়ার সার্ভিসও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণে নানা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়।