‘এরকম ঈদ আর আসেনি’

ঈদের ছুটিতে প্রতিবারই ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়; ঈদের পরদিন অনেকের সময় কাটে আত্মীয়-বন্ধুদের বাসায় বেড়িয়ে, কিংবা বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে এবারের ঈদে সবই অন্যরকম।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2020, 10:24 AM
Updated : 26 May 2020, 10:24 AM

সোমবার ঈদের দিন সকালে অনেকে নামাজ পড়তে গেছেন মসজিদে। দুপুরের পর রিকশা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন অনেকে। তবে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার পথঘাট একেবারেই ফাঁকা।

দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বেইলি রোড, হেয়ার রোড, মালিবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়া পল্টন ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেল যানবাহন একেবারেই কম। অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব আর রিকশা চালকরা বসে আছেন যাত্রীর অপেক্ষায়।

কাকরাইলের কাছে হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালক আলিম উদ্দিন বললেন, “ঈদের পরদিন ভাবছিলাম যাত্রী পাব, সেজন্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। সকালে একজন যাত্রী নিয়ে উত্তরা থেকে কাকরাইল এসেছিলাম। এখন ৪টা একেবারে খালি হাতে বসে আছি। এবারের ঈদের মত এত খারাপ সময় আর দেখিনি।”  

রাজনীতিবিদদের অনেকে ঈদের ছুটিতে নিজের নির্বাচনী এলাকায় চলে যেতেন, এবার তাও করছেন না তারা।

নয়া পল্টন এলাকার বাসিন্দা একজন পুরনো রাজনীতিবিদ বললেন, অন্যবার ঈদের দিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়, এবার সব বন্ধ।

“ছেলে-বউমা-নাতি-নাতনিরা যশোর-রাজশাহী থাকে। ঈদে টেলিফোনে তাদের খোঁজখবর নিয়েছি। দেখা হওয়ার তো সুযোগ নেই।”

বেইলি রোডের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা খন্দকার শফিকুল ইসলাম। তিনিও ঈদে পরিবারের সঙ্গে বাসাতেই আছেন, বের হচ্ছেন না।  

“গতবারও ঈদের পরের দিন উত্তরায় ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। এবার করোনার কারণে সেটা বাদ দিয়েছি। ইন্টারনেটে ভাই-ভাবির সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় সেরেছি।”

শফিকুলের স্ত্রী ফরিদা ইসলাম একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। তিনি জানালেন, এমনিতে ঈদের পরদিন বাচ্চারা বিকালে রমনা পার্কে ঘুরতে যেত। এবার তারা যাচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে রমনা পার্ক। ঈদের দিন আর পরদিন ঢাকার প্রায় সব পার্কই কিশোর-তরুণদের পদচারণায় মুখর থাকত। এখন শুধুই নীরবতা।

অটোরিকশা চালক মোমেন জানালেন, ঈদের পরেরদিন রমনা পার্ক ও মীরপুর চিড়িয়াখানায় প্রচণ্ড ভিড় থাকত অন্যসময়। এবার চিড়িয়াখানাও বন্ধ।

“মানুষজন বের হচ্ছে না খুব ঠেকায় না পড়লে। আমাদেরও ক্ষ্যাপ নাই। তবে হাতিরঝিলে গতকাল মানুষ গেছে। আজকেও যাবে মনে হয়।”

মালিবাগের কাছে যাত্রীর আশায় বসে ছিলেন রিকশা চালক রিপন। তিনি বললেন, “করোনার কারণে ঈদের দিনও মাটি, ঈদের পরের দিনও লোক নাই। এইভাবে চললে আমরা বাঁচমু কেমনে কন? খুব কষ্টে আছি স্যার।”

দর্শনার্থী না থাকলেও রমনা পার্ক এই সময়ে হয়ে উঠেছে আরও সবুজ; বিভিন্ন গাছে ফুটে আছে ফুল। সবুজের বাহার দেখা গেল বেইলি রোডেও।

ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের মেয়ে নিলুফার ইয়াসমীন জলি বললেন, “এখন প্রকৃতি সবচেয়ে নিরাপদে আছে। রাস্তায় মানুষ কম, গাড়ি কম, ধুলাও কম। তাই গাছ আর ফুলগুলো আগের চেয়ে ভালো আছে।”