‘কোলাকুলি করতে পারিনি, কষ্ট হচ্ছে’

করোনাভাইরাস মহামারীতে কিছুটা শিথিল লকডাউনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত হলেও বরাবরের মতো উৎসবের আমেজ ছিল না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2020, 07:09 AM
Updated : 25 May 2020, 05:40 PM

জামায়াত শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের আনন্দ ভাগাভাগির চিরাচরিত দৃশ্য এবার অনুপস্থিত; হাত মেলানো ও কোলাকুলির মতো সংস্পর্শ নিষিদ্ধ থাকায় অতৃপ্তির কথা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

রাজধানীতে বরাবর জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা বন্ধ। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জামাতে আশপাশের বাসিন্দারা অংশ নেন।

স্বল্প জনসমাগম হলেও সকাল ৭টা থেকে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজারের বিসিসি রোডের বাসিন্দা কিশোর ফাইজউদ্দিন ফারদিন ছোট ভাইকে নিয়ে বাবার সঙ্গে নামাজ পড়েন এখানে।

ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের এ-লেভেলের ছাত্র ফাইজউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোলাকুলি করতে পারছি না, এর জন্য কষ্ট হচ্ছে।

“অন্যবার ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে কত হইহুল্লোড় করে বেড়িয়েছি। এবার আর কোনো কিছু নেই। বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যাব, তার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতির ঈদে খুশি নেই ।“

ছেলে অনিককে নিয়ে বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছিলেন নবীউল্লাহ । তার কণ্ঠেও বাজল একই সুর।

“ছেলে কোলাকুলি করতে পারেনি আব্বুর সাথে। তাই মন খারাপ। তোপখানা মোড় থেকে লাল বেলুন কিনে তার রাগ ভাঙিয়েছি।”

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের দ্বিতীয় জামাত শেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে ঈদের নামাজের পর প্রার্থনা করেন পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী।

দ্বিতীয় জামায়াত শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা মুসল্লিদের মধ্যে কোনো উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি, চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা।

পুরান ঢাকার মালিটোলা থেকে আসা ব্যবসায়ী মঈনউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা নেই, বাণিজ্য নেই। কবে যে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব তার কোনো ঠিক নেই।“  

বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জামাতের আগে বয়ানে পেশ ইমাম মাওলানা এহসানউল্লাহ জিলানী বলেন, “পবিত্র ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, মহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে না যাওয়া উত্তম, যাতে মহামারী নিয়ন্ত্রিত থাকে, নতুন করে সংক্রমণ না হয়। মহামারীতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, একজনের দ্বারা যেন অন্যজন সংক্রমিত না হয়।

“সেকারণে এক কাতার বাদ দিয়ে দিয়ে আপনারা দাঁড়াবেন, মসজিদে প্রবেশ করার সময় নিয়ম মেনে প্রবেশ করবেন। কাতারে বসার সময় এক জন থেকে অন্য জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখবেন।”

মহামারীর পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্ত থাকতে সবাইকে সতর্ক করে পেশ ইমাম বলেন, “সবাই যার যার বাড়ি, আঙ্গিনাসহ সব কিছুই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। করোনার ও ডেঙ্গু উভয় থেকেই আমাদের বাঁচতে হবে।”

বায়তুল মোকাররমের চারটি গেইটে আটটি জীবাণুনাশক কক্ষ স্থাপন করা হয়। তার মধ্য দিয়ে সারিবদ্ধভাবে মুসল্লিরা প্রবেশ করেন এবং বের হন।

এই মসজিদে মোট চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কোনো জামাত শেষেই মসজিদের বাইরে কাউকে কোলাকুলি বা হাত মেলাতে দেখা যায়নি।

খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ

খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায়ে সরকার নিষেধ করলেও দক্ষিণ কমলাপুর এলাকার মূল রাস্তা আটকে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। 

এলাকার বাসিন্দারা ‘পরি-জামিলা দারুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানার’ সামনের রাস্তা আটকে নামাজ আদায় করে।

পেশায় ইলেক্ট্রেশিয়ান মনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এভাবে নামাজ আদায় করা ঠিক না জানি। কিন্তু কি করবো মজিদের (মসজিদের) ভিতরে তো জাগা নাই। এই দেশে কুনু নিয়ম কানুন নাই।

“ক্যান মজিদের মাইকে কইতে পারলো না, মজিদের বাইরে নামাজ না পড়তে, কই একবারও তো শুনলাম না।” 

ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন পাটোয়ারি বলেন, “কপালে থাকলে হইবো। ঈদের নামাজ তো বাদ দিতে পারুম না। আরো শত শত মানুষ আইসে। তাগো হইলে আমারও হোক।”