ঈদের নামাজে হাজারো মানুষ, মোনাজাতে সুস্থতার প্রত্যাশা

মহামারীর মধ্যে এসেছে এবারের ঈদুল ফিতর; সংক্রমণ এড়াতে বিধিনিষেধ মেনে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন হাজারো মুসলমান। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2020, 03:01 AM
Updated : 25 May 2020, 11:35 AM

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এবারের ঈদের প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়। মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান তাতে ইমামতি করেন।

নামাজ শেষে মোনাজাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের জন্য দোয়া করা হয়। দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। বালা মুসিবত থেকে দেশকে সুরক্ষা চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে।

প্রথম জামাত শেষ হলে দ্বিতীয় জামাত শুরু হয় সকাল ৮টায়। ইমাম মুহিবুল্লাহিল বাকী মোনাজাতে বলেন, “হে আল্লাহ… করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের হেফাজত করো, যারা আক্রান্ত তাদের ক্ষমা করে দাও মাওলা। করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে সকল মানুষকে মুক্তি দাও। বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের হেফাজত কর মাওলা, আমাদের ক্ষমা করে দাও।”

সকাল ৯টায়, সকাল ১০টায় এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে পর্যায়ক্রমে আরও তিনটি জামাত হয় এ মসজিদে।

মহামারীর মধ্যে এবার ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঈদের নামাজ মসজিদে মসজিদেই হচ্ছে।

শারীরিক দূরত্ব রেখে কাতার করতে হয়েছে বলে ভেতরে জায়গা না পেয়ে মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে, রাস্তায়, খোলা জায়গাতেও অনেককে নামাজে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক বলে এবার বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে নামাজ পড়তে হয়েছে সবাইকে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, “যারা মসজিদের আসছেন, তাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। সবাইকে বলা হয়েছে বাসা থেকে ওজু করে মাস্ক পরে মসজিদে যেতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসা বাধ্যতামূলক।”

নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোতেও এবার নিষেধ ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ তা মেনে চললেও দুই-একটি ব্যতিক্রমও দেখা গেছে।

ঈদ জামায়াতে শিশু ও বৃদ্ধদের অংশ না নিতে বলা হলেও দেখা গেছে অনেকে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজে এসেছেন। প্রবীণদেরও বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে দেখা গেছে।

প্রথম জামাতে যোগ দিতে সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই বায়তুল মোকাররমে আসতে শুরু করে মানুষ। নিয়ম মাফিক মাঝে দূরত্ব রেখে তারা বসেন।

মাইকে বার বার অনুরোধ জানানো হয়েছে যাতে সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বসেন। মসজিদের ভেতরে তা মেনে চলেছেন প্রায় সবাই। তবে মসজিদের বারান্দা ও সিঁড়িতে কোথাও কোথাও ভিড় হয়েছে। নামাজ শেষে গেইটেও বের হওয়ার জন্য কিছুটা হুড়াহুড়ি দেখা গেছে।

সকাল ৭টার প্রথম জামাতের খুতবা পাঠের সময় বায়তুল মোকাররমের দুই গেইটের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন দ্বিতীয় জামাতে যোগ দিতে আসা মানুষ।

মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রোজেক্ট মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের প্রথম জামাত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই সবাইকে জমাতে অংশ নিতে দেখা যায়।

তিন তলা মসজিদের পুরোটা ভরে গেলে মসজিদের সামনের মাঠটিতে কাতারে দাঁড়ায় মানুষ। নামাজ শেষে কাউকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি।

মিরপুর রূপনগর আবাসিক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সাড়ে ৮টায় দুটি জামাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নামাজ পড়েন।

নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।

মসজিদের ভেতরে সবাইকে দূরত্ব বজায় রেখেই বসতে দেখা যায়। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানোর সেই চেনা দৃশ্য ছিল না।

 

পুরান ঢাকার আরমানিটোলার 'তারা' মসজিদ দুটি জামাত সকাল ৮টায় ও ৯টায়। নামাজ পড়তে আসা প্রায় সবার মুখে ছিল মাস্ক।

পুলিশকে হ্যান্ড মাইকে স্বাস্থ্যবিধির কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় করতে অনুরোধ করতে দেখা যায়।

সকাল সাড়ে ৮টায় লালবাগ শাহী মসজিদে নামাজ পড়ার পর কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, “সবাই দূরত্ব রেখে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন, মাস্ক পরেই মসজিদে এসেছিলেন, তবে নামাজ পড়ার সময় অনেকে মাক্স সরিয়ে রাখেন।”

পুরান ঢাকার শাহীন আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামাজিক দূরত্ব রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করার কথা বলা হলেও আমার কাছে মনে হল বাসায় নামাজ পড়াই সবচেয়ে উত্তম ও নিরাপদ। তাই ঘরে একাই নামাজ পড়েছি।”

আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনিতে দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন ঈদের সকালে। এবার তা হয়নি।

প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শোলাকিয়া ময়দানেও এবার ঈদ জামাতের আয়োজন নেই।

অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে আসা ঈদের আগের দিন করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে কেড়ে নিয়েছে ২৮ জনের প্রাণ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩৩ হাজার ৬১০ জনকে।