বিদেশফেরতদের ৮৭ শতাংশের আয়ের কোনো উৎস নেই: ব্র্যাক

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক গন্তব্যের চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক গবেষণায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2020, 07:24 PM
Updated : 22 May 2020, 07:25 PM

ওই গবেষণায় দেখা যায়, বিদেশফেরতদের ৮৭ শতাংশেরই এখন কোনো আয়ের উৎস নেই। নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ৫২ শতাংশ বলছেন, তাদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি পরিচালিত ‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব’ শীর্ষক জরিপে উঠে আসে এসব তথ্য।

দেশে ফেরত আসা ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর উপর পরিচালনা করা হয় ওই জরিপ, যাদের ৮৬ শতাংশই ফিরেছিলেন মার্চ মাসে।

বিদেশফেরতদের আর্থিক দিক বিবেচনায় আনার পরামর্শ দিয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “আমরা দেখছি অনেকে ফেরত আসছে। সামনের দিনগুলোতে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়ে ফিরে আসতে পারেন।

“সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি শুধু সরকারের একার নয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।”

সমস্যা সমাধানে ফিরে আসা প্রবাসী ও তাদের পরিবারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে সহজ শর্তে বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ব্র্যাক।

একইসঙ্গে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিরূপণ করে মনোসামাজিক সহায়তাসহ টেকসই পুনরকেত্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা, গন্তব্য দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা যেন কাজে ফিরতে পারেন সেই উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির হিসাব বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি যখন ফ্লাইট চলাচল ছিল সেই সময় অন্ততপক্ষে দুই লাখ প্রবাসী ছুটিতে দেশে এসেছেন। আর ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর মার্চের শেষ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরছেন। জুন মাসে আরও অন্তত পক্ষে ২৮ হাজার ফিরবেন।

ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ ‍এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও কুয়েত থেকে। বাকিরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশ বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ৩৫ শতাংশ বলছেনে, তারা ছুটিতে এসেছিলেন। ১৮ শতাংশ বলেছেন, তারা পারিবারিক কারণে চলে এসেছেন। ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ফেরার সাথে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই।

কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ বলেছেন, তারা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ১৪ শতাংশ বলেছেন, তারা কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো মানতে পারেননি। দুই শতাংশ বলেছেন, তারা এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।

ফেরত আসার পর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ বলেছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সিলর তাদের সবাইকে মনোসামাজিক সেবা দিয়েছেন।

২৯ শতাংশ অভিবাসী বলেছেন, তাদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনরা তাদের ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি এবং তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেনি। তবে ৯৭ শতাংশ বলেছেন, এক্ষেত্রে পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জানান, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯ শতাংশ জানান, তাদের যে সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ।

১০ শতাংশ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তারা ঋণ নিয়েছেন। ১৪ শতাংশ প্রবাসী তাদের সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনো প্রকার তথ্য দিতে রাজি হননি। 

জরিপে দেখা যায়, ফেরত আসা অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ এখনও জীবিকা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি। ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা পুনরায় বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন। বাকিরা কৃষিভিত্তিক ছোটো ব্যবসা, মুদি দোকান বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া বিদেশফেরত এই অভিবাসীদের ৯১ শতাংশই বলেছেন, তারা এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো জায়গা থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি।