মহামারীর মধ্যে এফসিপিএস পরীক্ষার সূচি, ডাক্তারদের আপত্তি

নতুন করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘোষিত এফসিপিএস পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন চিকিৎসকরা।

ওবায়দুর মাসুম জেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2020, 01:25 PM
Updated : 22 May 2020, 01:25 PM

তারা বলছেন, তাদের অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালের ‘করোনা ইউনিটে’ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই। তাছাড়া যারা রাজধানীর বাইরের হাসপাতালে আছেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের পক্ষে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দেয়াও কঠিন। এ অবস্থায় পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে।

গত ১১ মে বিসিপিএসের ওয়েবসাইটে আগামী জুলাইয়ে এফসিপিএস পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৩ জুনের মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষার ফি জমা দিতে বলা হয়।

ফেলো অব কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস বা এফসিপিএস চিকিৎসকদের উচ্চতর ডিগ্রি। এই পরীক্ষাটি দুই ভাগে হয়। পরীক্ষাটি বেশ জটিল, সময় এবং শ্রমসাধ্য বলে জানান চিকিৎসকরা।

এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন শেষ করার দেড় মাসের মধ্যে একজন চিকিৎসক এফসিপিএস পরীক্ষার প্রথম পার্টে অংশ নিতে পারেন। প্রথম পার্টে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় পার্টে অংশ নেওয়ার একটি শর্ত পূরণ হয়।

দ্বিতীয় পার্টে অংশ নেওয়ার জন্য আরও দুটি শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হল- তিন বছরের প্রশিক্ষণ ও এক বছরের কোর্স বা এক বছর পেইড পোস্টে প্রশিক্ষণ। এছাড়া বিসিপিএস অনুমোদিত একজন সুপারভাইজারের অধীনে একটি ডিসারটেশন জমা দেওয়া।

চিকিৎসকদের কাছে এফসিপিএস সনদ গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে চাকরিতে পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট জড়িত। এছাড়া প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রেও এই সনদ ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সনদটি চিকিৎসকদের জন্য সম্মানেরও।

প্রতি বছর কয়েক হাজার চিকিৎসক এই পরীক্ষায় অংশ নিলেও পান করেন ৫-৬ শতাংশ।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানান, এফসিপিএস পার্ট-২ পরীক্ষা দিতে দুই বছরের জন্য ঢাকায় বদলি হয়েছিলেন তিনি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তাকে কুর্মিটোলায় পাঠানো হয়।

ওই চিকিৎসক জানান, টানা দশদিন ডিউটি করার পর সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এভাবে মাসে ২০ দিন ডিউটি করতে হয়। এ কারণে প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তিনি। এ অবস্থায় জুলাইয়ে পরীক্ষা হলে প্রস্তুতি ছাড়াই তাতে অংশ নিতে হবে তাকে।

“আমরা একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা এমন কোনো পরীক্ষা নয় যে বসলাম, দিলাম। আমাকে কমপক্ষে চার মাস ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে। প্রিপারেশন ছাড়া পরীক্ষায় বসা ক্যারিয়ারের জন্য একটা বড় ক্ষতি। আমার দুই বছরের ছুটি শেষ হবে জুলাইয়ে। এরপর ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়ে যাবে। কিন্তু পরীক্ষা না হলে আমাকে হয়তো বদলি করবে না।”

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক নিরুপম দাস এই পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন পরীক্ষা নিলে চিকিৎসকরা পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাহলে চিকিৎসা কার্যক্রমে ভাটা পড়বে।

“এই পরিস্থিতিতে রয়েল কলেজ অব ইংল্যান্ড সব বাতিল করেছে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সে জায়গায় তারা (বিসিপিএস) এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন নিল বুঝতে পারছি না। এটা চলমান কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে যে কার্যক্রম তা পেছনে নিয়ে যাবে। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।”

ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, পরীক্ষার হলগুলোয় লোক সমাগম হবে। এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এতে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন তিনি।

এফসিপিএস পরীক্ষার্থী ওই চিকিৎসক বলেন, পরীক্ষার হলে সবাইকে লাইন ধরে ঢুকতে হবে। এখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

“ভাইভার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখতে হয় স্যারদের সামনে। আমি যাদের দেখব তারা যে কোভিড-১৯ হবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে? তাদের সবাইকে কি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে আনা সম্ভব?”

পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আসবেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। দেশজুড়ে লকডাউন চলার মধ্যে তাদের পক্ষে ঢাকায় আসাও কঠিন বলে মনে করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক।

“এ সময় ঢাকার বাইরে থেকে যাতায়াত করা কঠিন। এই বিষয়টা তো কেউ দেখছেন না।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের চেয়ারম্যান (এক্সামিনেশন) টিআইএমএ ফারুক বলেছেন, বিষয়টি তাদের মাথায় আছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কথা হল তাদের প্রস্তুতি থাকুক। তাদেরকে একটা সময় দিয়ে যখন কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কমবে তখন আমরা পরীক্ষা নেব। এ ব্যাপারে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন আশ্বস্ত হয়।”