আম্পান ঢুকছে বাংলাদেশে

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ার পর স্থলভাগে তাণ্ডব চালাতে চালাতে অগ্রসর হচ্ছে কলকাতার দিকে, এর বিস্তার প্রবেশ করেছে বাংলাদেশেও।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 12:42 PM
Updated : 20 May 2020, 03:22 PM

আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্পান বিকাল ৪টার দিকে উপকূলের বাংলাদেশ অংশে পৌঁছেছে। ভারতের সাগারদ্বীপের পাশ দিয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভূভাগে উঠে আসছে।”

ওই সময় এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝেড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ব্যস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জানিয়ে মান্নান বলেন, “পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগতে পারে। এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে।”

ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, বিশাল ব্যাপ্তির এ ঝড় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে এবং ততক্ষণে এর অগ্রভাগ পৌঁছে যায় কলকাতায়।

স্থলভাবে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে কমতে শুরু করবে ঝড়ের শক্তি। তবে এগোনোর গতি থামবে না। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে এ ঝড়ের চোখ বা কেন্দ্র মধ্যরাতের পর কোনো এক সময় মেহেরপুর এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। 

গত ১৬ মে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া আম্পান এক পর্যায়ে শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল। বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন এটি। তবে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে আসতে কিছুটা শক্তি হারিয়ে তা আবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঝড় পশ্চিমবঙ্গের দীঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে।  

সে সময় এর অবস্থান ছিল ভারতের সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার, দীঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।

উপকূলীয় জেলার দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আম্পানের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই দেশের অনেক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। মধ্যরাতের পর বৃষ্টির বেগ বাড়তে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে বাড়ে বাতাসের জোর। সেই সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতে নদীর পানিও বাড়তে শুরু করে। 

আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ঝড়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ উপকূলে ঢুকে পড়ার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুরু হয় প্রবল ঝড়ো বাতাসের দাপট।

ঝড় এগিয়ে আসতে থাকায় মঙ্গলবার থেকেই দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

ঝড় উপকূলে আঘাত হানার আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বুধবার দুপুরে জানান, সব মিলিয়ে ২৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০৭ জনকে ১৪ হাজার ৩৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে এ ঝড় এসেছে বলে সংক্রমণ এড়াতে আশ্রয় কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে থাকার এবং স্বাস্থবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।