আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে: কাদের

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ এর আঘাত থেকে জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2020, 09:00 AM
Updated : 19 May 2020, 11:01 AM

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না হয় তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

“ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আশ্রয়গ্রহণকারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “প্রাণঘাতী এই সংকটকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এই সাইক্লোন বুধবার বিকেল নাগাদ উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। এটি সিডরের চেয়েও বিধ্বংসী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

“আমি উপকূলীয় জেলার জনসাধারণকে সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ করছি পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি এবং মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রশাসনকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।”

মঙ্গলবার আবহাওয়ার সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্নএলাকায় অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন আম্পান আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে এসে বেলা ১২টায় একই এলাকায় অবস্থান করছিল।

তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, এ ঝড় আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে আমপান যখন উপকূল অতিক্রম করবে, তখন উপকূলীয় দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে আবহওয়ার বিশেষ বুলেটিনে।

ঘরমুখী মানুষের ঈদ যাত্রার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি করোনা সংকটকালে আসন্ন ঈদুল ফিতরের মানুষ দলে দলে গ্রামমুখী হয়েছে, যা অত্যন্ত বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। জেনেশুনে এমন ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে নিজেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি আমরা আশপাশের অন্যদের জীবন ও জীবিকায় হুমকি ডেকে আনব। “তাই আবারও অনুরোধ করব যারা যেখানে আছেন, সেখানে থেকে আপনারা ঈদ অতিবাহিত করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, স্থানান্তর আপাতত বন্ধ রাখুন।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে লার্জেস সিঙ্গেল ডে অতিক্রম করছি। দেশে নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল আগের যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি, যা নতুন রেকর্ড।

“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশা প্রকাশ করেছে করোনা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাই আসন্ন কঠিন সময় মোকাবেলায় আমাদের সকলকে সমন্বিত ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার বিকল্প নেই।”

করোনাভাইরাস এর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে উচ্চমূল্য রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এমন সংকট কালে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় অতি উচ্চমূল্য চার্জ করছে বলে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আমি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকদের জনস্বার্থে চলমান পরিস্থিতি ও মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসার নমুনা পরীক্ষা ও খরচ সহনীয় পর্যায়ে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

শ্রমিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ঈদের প্রাক্কালে বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করার জন্য আমি মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

“পাশাপাশি করোনাজনিত এ সংকটে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করছে গণমাধ্যমকর্মীরা। যে সকল গণমাধ্যম মালিকরা এখনও সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেননি তাদের প্রতি অনুরোধ করছি সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ঈদের আগে পরিশোধ করুন।”

বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সংক্রমণে করোনা কাউকে করুণা করবে না। কাদা ছোড়াছুড়ি না করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করুন, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। করোনা মোকাবেলায় ঐক্যই হবে আমাদের মূল শক্তি।”