ভার্চুয়াল কোর্ট: অধস্তন আদালতে কেবল জামিন শুনানি, হাই কোর্টে ৩ বেঞ্চ

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আদালতের বিচারকাজ চালানোর ক্ষমতা পাওয়ার পর কীভাবে সেই কার্যক্রম চলবে সে বিষয়ে নির্দেশনা বা ‘প্র্যাকটিস ডাইরেকশন’ জারি করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2020, 02:39 PM
Updated : 10 May 2020, 02:39 PM

এ ব্যবস্থায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও অবকাশের মধ্যে দেশের অধস্তন আদালতগুলোকে ‘বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে আপাতত কেবল জামিন আবেদনের ভার্চুয়াল শুনানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

হাই কোর্ট বিভাগে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে ‘অতি জরুরি’ রিট ও দেওয়ানি মামলা, ফৌজদারি মামলা ও সংশ্লিষ্ট জামিন আবেদন এবং সম্পত্তি, বিবাহ বিচ্ছেদসহ কিছু মামলার শুনানি করা যাবে।

এছাড়া বিচারপতি নুরুজ্জামানকে দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরিচালনার দায়িত্ব।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর, রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞা ও হাই কোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে তিনটি আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে রোববার প্রধান বিচারপতির নির্দেশনাগুলো জানানো হয়।

অধস্তন আদালত

নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এই ছুটির সময়ে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এবং উচ্চ আদালতের জারি করা ‘বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে।

বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এই ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

তবে কবে থেকে অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু করা যাবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে।

হাই কোর্ট

হাই কোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

# জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং এ সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

# জরুরি সকল প্রকার ফৌজদারি মোশন ও এ সংক্রান্ত জামিনের আবেদন গ্রহণ করবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।

# বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আদীম অধিক্ষেত্রাধীন জরুরি বিষয়; যেমন,সম্পত্তি, বিয়ে,কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিষয়ের আপিল ও আবেদন গ্রহণ ও শুনানি করবেন।

তবে হাই কোর্টের এই তিনটি বেঞ্চে কবে থেকে বিচারিক কাজ শুরু করবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে।

চেম্বার আদালত

চেম্বার আদালত পরিচালনার দিনক্ষণ উল্লেখ করা দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুনানি নেবেন।

নতুন যুগের সূচনা

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে শনিবার জারি করা অধ্যাদেশকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

রোববার বিকালে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, “এটা বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় সূচনার আইন।”

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরের কাজ ১৯৯৬ সাল থেকেই শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সকল অফিসকে ডিজিটাল রূপ দেওয়া। ই-জুডিশিয়ারি করার জন্যও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, যার কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল।

“করোনাভাইরাসের প্রকোপে আদালতের প্রায় সকল কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই ভার্চুয়াল কোর্ট করে আমাদের বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার যে উদ্দেশ্য এবং ডিজিটালি সেটাকে করার যে পরিকল্পনা ছিল, সেটাকে এগিয়ে এনে আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট আরও আগে তৈরি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই পদক্ষেপকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।”

এই অধ্যাদেশে সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালগুলোতে ট্রায়াল, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত, আপিল শুনানি, স্বাক্ষ্যগ্রহণ, আরগুমেন্ট এবং আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই ক্ষমতাগুলো প্র্যাকটিস ডাইরেকশনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি প্রয়োগ করবেন।

“এখন আমাদের বিচারিক আদালতে সাংবিধানিকভাবে বিচারকার্য চালাতে আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি প্রয়োজন। এ অধ্যাদেশের একটি ধারায় বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল উপস্থিতি সশরীরে আদালতে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে।

“এ কারণে ফৌজদারি কার্যবিধি এবং দেওয়ানী কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনে যা কিছু থাকুক না কেন এই অধ্যাদেশ দ্বারা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাই কোর্ট বিভাগ এবং প্রধান বিচারপতি প্র্যাকটিস ডাইরেকশনের মাধ্যমে আদালতের কার্যপ্রণালী সেট করে দিয়ে বিচারকার্য চালাতে পারবেন।”

মন্ত্রী জানান, আপাতত নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন শুনানির মত প্রাথমিক বিষয়গুলো হলেও স্বাক্ষ্য আইন সংশোধন হওয়ার পরে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমেই অন্যান্য বিচারিক কাজগুলোও শুরু করা যাবে।

“তখন নিম্ন আদালত এবং বিচারিক আদালত ভার্চুয়াল কোর্টে মামলার বিচার, স্বাক্ষ্য গ্রহণ এবং আরগুমেন্ট শুনে রায় দিতে পারবে।”