রোববার দিনের প্রথম ভাগে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে লকডাউনের আগের সময়ের চিত্রই যেন দেখা গেল। মতিঝিল থেকে যাত্রাবাড়ীর পথে মোড়ে মোড়ে দেখা গেল প্রাইভেট কার, ট্রাক, রিকশা, হিউম্যান হলার, আর ঠেলা গাড়ির জটলা।
বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সময়ে শাপলা চত্বর থেকে হাটখোলা পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের ভিড়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িও আটকে থাকতে দেখা গেল।
কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, আরামবাগ সড়কে যানবাহনের ভিড় আর মানুষের ঢল দেখে চলতি পথের যাত্রীরাই ভাইরাসের বিস্তার বাড়ার শঙ্কার কথা বললেন।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি ফার্মের কর্মকর্তা সাব্বির হোসেনকে বের হতে হয়েছে অফিসের একটি জরুরি কাজে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টায় রাস্তার পরিস্থিতি দেখে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারলেন না।
‘‘শাটডাউনের মধ্যে রাস্তায় আজকে যে পরিমাণ গাড়ি-ঘোড়া নেমেছে, যেভাবে ফুটপাত দিয়ে গাদাগাদি করে মানুষজন ছুটছে- আমি আতঙ্কিত। এর মধ্যে রাস্তায় নেমে আমার নিজেরই ভয় লাগছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসরিন চৌধুরী আরামবাগের বাসা থেকে মতিঝিলে এসেছিলেন সোনালী ব্যাংকে কাজ সারতে। কিন্তু ভিড়ের কারণে সেখানে তাকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বলে জানালেন।
“আজকে থেকে দোকানপাট-শপিং মলে কড়াকড়ি শিথিল হয়েছে। বিধিনিষেধ কমতে থাকায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, মানুষজনও বেরিয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় এটা ঠিক হচ্ছে না। বিকল্প কিছু চিন্তা করা দরকার। মহামারী যে আমাদের শেষ করে দিতে পারে- এটা ভেবেই সবাইকে সতর্ক হতে হবে।”
সাংবাদিক বুঝতে পেরে একজন চালক বললেন, “রাস্তায় রিকশা নামাইছি বইলা আমাগো শাস্তি দিচ্ছে পুলিশ। ভাই ছবি তুইলেন না, একটু কইয়া দেন ছাইড়া দিতে।”
সেখানে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বললেন, “শাটডাউন চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে কোনো কারণ ছাড়া কেউ রাস্তায় না বের হয়।”
গত কয়েকদিনের তুলনায় রোববার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রচুর পরিমাণে রিকশা দেখা গেছে; বাস না চললেও অন্যান্য যানবাহন ছিল অনেক বেশি।
রোজার ঈদ সামনে রেখে এদিন থেকে ব্যাংকে লেনদেনের সময়ও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সে কারণে মতিঝিল এলাকায় চাপ বেশি ছিল।
এই চালক জানান, বনানী থেকে মতিঝিলে আসতে তার সময় লেগেছে প্রায় ৫০ মিনিট। মহাখালী, কাকরাইল, আরামবাগ আর শাপলা চত্বরের কাছে গাড়ির জটে আটকাতে হয়েছে।
“সরকারি ছুটি যখন দিল, তখন আসতে লাগত ১৫/২০ মিনিট। আর গত পরশু আসছি ৩০/৩৫ মিনিটে। আজকে ডাবল সময় লাগল ।”
হাটখোলার কাছে দেখা গেল, পুরান ঢাকার ঘোড়ার গাড়িও নেমেছে রাস্তায়। দুই যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে নারিন্দায়।
যাত্রাবাড়ীর কাছে দেখা গেল, লেগুনায় ঠাসাঠাসি করে মানুষ চলছে। প্রচুর ভিড় রাস্তা-ঘাটে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি যেন ভুলেই গেছে সবাই।
আয়াত আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, “আমি বাজার করতে আসছি মাস্ক আর গ্লাভস পরে। কিন্তু দেখেন অনেক মানুষের মুখে মাস্কও নেই। আমরা খুবই অসচেতন, বিবেকহীন মানুষ। আমরা এটাও বুঝি না যে, আমার কারণে আরেকজনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।”
রাস্তায় এমন ভিড় বাড়লেও শপিং মলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সরকার লকডাউন শিথিল করায় রোববার থেকে রাজধানীর বিপনী বিতানগুলে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা খোলা রাখার সুযোগ হয়েছে। তবে ঢাকার বড় শপিং মলগুলো কোনোটিই খোলেনি।
বসুন্ধরা মার্কেট ও যমুনা ফিউচার পার্ক আগেই ঘোষণা দিয়েছিল- এই মহামারীর মধ্যে তারা খুলবে না। মৌচাক মার্কেট, ফরচুন সুপার মার্কেট, পলওয়েল মার্কেট, সিটি হার্ট সেন্টার, টুইন টাওয়ারসহ বিভিন্ন বিপনী বিতানও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
হাফিজুর রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, “এই ফুটপাতে হকারি করি ৮ বছর হয়। এইবারের মত খারাপ সময়ে আর পড়ি নাই । মতিঝিলে এখন মানুষজন বাড়তেছে। বিক্রি যদি কিছু হয়, সেই আশাতেই আছি।”
আরও পড়ুন-