এখন আর ভোট নিয়ে তাড়া নেই ইসির

সংসদের উপ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে এখন আর তড়িঘড়ি করছে না নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2020, 05:49 AM
Updated : 9 May 2020, 06:41 AM

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে প্রথম দফায় ভোট করতে না পারায় ‘দৈব-দূর্বিপাকের কারণে’ সাংবিধানিকভাবে পরবর্তী ৯০ দিন সময় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বগুড়া-১, যশোর-৬ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল মার্চে। তবে ভোটের নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহ আগে তা স্থগিত করা হয়।

এর মধ্যে বগুড়া ও যাশোরের দুই আসনের উপ নির্বাচন এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধতা ছিল। এদিনে সাংসদের মৃত্যুতে ঢাকা-৫ ও পাবনা-৪ আসনও ইতোমধ্যে শূন্য হয়েছে। আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব নির্বাচন করার জন্যে ৯০ দিন সময় ছিল, সে সময় পার হল। এখন করোনাভাইরাস মহামারী চলছে; এটা দুর্যোগ। সংবিধান ও নির্বাচনী আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আরও ৯০ দিন সময় দিয়েছে ভোটের জন্য। সুতরাং, কোনো তাড়া নেই আমাদের।”

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে তখন ভোটের বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন বৈঠকে বসতে পারে বলে জানান তিনি।

“আরও অন্তত ৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এরপরও যদি সম্ভব না হয় রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠাবেন। অনেক সময় রয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশ হলেই কমিশনে এ নিয়ে বসব।”

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় বলা হয়েছে-

সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত শূন্যপদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, কোন দৈব-দূর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হয়, তাহা হইলে উক্ত মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের খবর প্রকাশ করা হয় ৮ মার্চ। এ নিয়ে উদ্বেগ আর রোগ বিস্তারের শঙ্কার মধ্যেই ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপ নির্বাচন সেরে ফেলে ইসি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সে সময় বলছিল, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ভোট করে ইসি। স্বাভাবিকভাবেই এসব নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ইসির ওই তাড়াহুড়ো নিয়ে সে

ওই তিন নির্বাচনের পরের সপ্তাহেই ২৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বগুড়া-১, যশোর-৬ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন, যা স্থগিত করে নির্বাচন

রফিকুল ইসলাম বলেন, “পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে বলা যাচ্ছে না। দুর্যোগ কেটে গেলেই ভোটের চিন্তা করা যাবে।”

৪ শূন্য আসনে উপ নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটির ভোট

গত ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন ফাঁকা হয়।

সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, বগুড়া-১, যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন এপ্রিলের মধ্যে; জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি ভোট শেষ করার কথা ইসির।

পাবনা-৪ আসনের (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২ এপ্রিল। ঢাকা-৫ আসনের (ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল) সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যান ৬ মে।

এখন এ দুটো আসনেও উপ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়। এরপর এক মাস বাইরের সব ধরনের কাজকর্ম, দোকানপাট, কল-কারখানা ও গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি পোশাক কারখানা চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে শপিং মলগুলোও খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার।

কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সব কিছু খুলে দিলে রোগী বাড়বেই।