মঙ্গলবার পর্যন্ত এক হাজার ১৮৯ জন পুলিশ সদস্য নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যই ৫৭৬ জন বলে পুলিশ সদরদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আক্রান্তদের বাইরে কোয়োরেন্টিনে আছেন এক হাজার ২৬০ জন এবং আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৮৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্ হয়েছেন ৮৫ জন পুলিশ সদস্য।
গত কয়েক দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে পুলিশে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, “পুলিশিং একটি ইউনিক পেশা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপক সুযোগ এই পেশায় রয়েছে, এটি অন্য কোনো পেশায় নেই। এই বিশেষ দিকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে।”
তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হয়েছে এবং আইসোলেশন নিশ্চিত করার জন্যও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছে পুলিশ।
“এছাড়া খুব কাছে থেকে এগুলো নিশ্চিত করতে হয়। পাশাপশি পুলিশ যখন দেখে কোনো রোগীর বা ব্যক্তির চিকিৎসা প্রয়োজন, হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা সেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। আবার দ্রব্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য বাজারে যেতে হয়েছে। মানুষের কাছে থেকে কাজ করতে হয়েছে। বিভিন্ন কারণে কোথায়ও বিক্ষোভ হলেও সেখানে পুলিশকে মাঝখানে থেকে কাজ করতে হয়েছে।
“এই ভাইরাসে যখন কেউ মারা যাচ্ছেন আর কেউ এগিয়ে না আসলেও পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন ওই ব্যক্তির জানাজা বা সৎকারে এবং দাফনে যাচ্ছেন- এতে করে পুলিশে কিছু ঝুঁকি থাকছে।”
এছাড়া পুলিশের কোনো একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যে সহজে সংক্রমিত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে বলেও জানান তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ব্যারাকে বা পুলিশ লাইনসে যেভাবে থাকে চিরাচারিতভাবে অল্প পরিসর জায়গায় অনেককে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত মান উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে হুট করে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ব্যারাকে বা লাইনসে যারা অনেকে এক সঙ্গে থাকেন। এই একসঙ্গে থাকা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
“আমরা চেষ্টা করেছি, সেখানে যারা থাকেন তাদের সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখার জন্য। তা আমরা করেছিও স্বাস্থ্য বিধি মেনে থাকার জন্য।
“তারপরও পেশাগত কারণে বাড়তি কিছু ঝুঁকির মধ্যে সব সময় থেকে যাই। এই সকল কারণে বাংলাদেশ পুলিশে সংক্রমণের হার একটু বেশি। যেহেতু আমাদের ঝুঁকি বেশি, আমরা ঝুঁকি নিচ্ছিও।”
তিনি বলেছেন, “মুখে মাস্ক অবশ্যই রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাত কোনোভাবেই মুখে দেওয়া যাবে না।”
আক্রান্ত হলেও মনোবল না হারিয়ে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দিয়েছেন করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া চট্টগ্রামের প্রথম পুলিশ সদস্য অরুণ চাকমা।
রোববার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সহকর্মীসহ অন্যদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “যে কেউই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এই সময়ে কেউ মনোবল হারালে চলবে না।”
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯২৯ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ১৮৯ জন পুলিশ হওয়ায় একক পেশাজীবী হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।