টিভি ক্লাসের বাইরে অন্তত ২০% শিক্ষার্থী

কোভিড-১৯ মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংসদ টেলিভিশনে যেসব ক্লাস দেখানো হচ্ছে, অন্তত ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাতে অংশ নিতে পারছেন না বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2020, 11:27 AM
Updated : 3 May 2020, 11:27 AM

শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব শিক্ষার্থী টিভির ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। কোনো শিক্ষার্থীই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি তাদের মাথায় রয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকের এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের ক্লাস সংসদ টিভিতে দেখানো শুরু হয়েছে।

এই ক্লাস দেখে শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ করে স্কুল খোলার পর তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেবে। বাড়ির কাজের উপর প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঘরে টিভি থাকলেও কেবল সংযোগ ছাড়া সংসদ টিভি দেখা যায় না। অনেকের বাড়িতে টিভি নেই। অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় তারা টিভি দেখার সুযোগ পান না। কিছু কিছু অঞ্চলে সব সময় বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঠিকমত টিভির ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না বলে খোঁজ নিয়ে বলছেন তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক  শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপারিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কত সংখ্যক শিক্ষার্থী এই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমাদের সার্ভে হচ্ছে ৮০ শতাংশের মত শিক্ষার্থী ক্লাস করছে।”

যেসব শিক্ষার্থী সংসদ টিভির ক্লাসের বাইরে রয়েছে তাদের মধ্যে চর, হাওর, পাহাড়ি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীই বেশি বলে জানান তিনি।

গোলাম ফারুক বলেন, “যাদের বাড়িতে কেবল সংযোগ আছে সেখানে যেন অবশ্যই সংসদ টিভি রাখা হয় সে বিষয়ে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীদের আমরা বলে দিয়েছিলাম, এখন সেই সমস্যা নেই।

“তবে অনেক জায়গায় এখনও বিদ্যুৎ নেই। অনেক রিমোট এরিয়ায় সব সময় ইলেকট্রিসিটি থাকে না। এসব কারণে কিছু আউট অব রিচ আছে। আমরা এসব তথ্য সংগ্রহ করছি।”

প্রকৃত অবস্থা জানতে প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হবে জানিয়ে মাউশি মহাপরিচালক বলেন, “যারা টিভি ক্লাসের আওতায় আসছে না তাদের জন্য ভিন্ন পন্থা নেওয়া হবে। কমিউনিটি রেডিওতে ক্লাসগুলোতে প্রচারের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

“যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই সংসদ টিভিতে ক্লাস দেখানো অব্যাহত থাকবে। অভিভাবকরাও চাচ্ছেন এই প্রোগ্রামটা যেন চলে।”

প্রাথমিকের ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ক্লাসে অংশ নিচ্ছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর ধারণা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যাদের বাড়িতে টেলিভিশন আছে তারা সবাই ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। শিক্ষকরাও ফলোআপ করছেন, প্রতিদিনই তারা রিপোর্ট করছেন।

“তবে এটাও ঠিক, গ্রামে-গঞ্জে হয়ত অনেকের ঘরেই টিভি নেই। একটা অংশ এর বাইরে থাকবেই। যারা বাদ যাবে তাদের জন্য রিকভারি প্ল্যান তৈরি করছি।”

কেবল নেটওয়ার্ক এখন গ্রামেও বিস্তৃতি লাভ করেছে জানিয়ে ফসিউল্লাহ বলেন, “তবে হয়ত অনেকের টিভিতে কেবল সংযোগ নেই। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল ক্যাবল নেটওয়ার্কে সংসদ টিভি দেখতে যাতে কারো সমস্যা না হয়।

“যাদের সুযোগ আছে তারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে। শিক্ষকরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের রিপোর্ট করছেন।”

কোনো শিক্ষার্থীই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রাথশিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে তা কেউই বলতে পারছে না। ফলে টিভি ক্লাসের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

“যদি এমন হয়, এবার স্কুল খোলার মত পরিস্থিতি তৈরি হল না, তখন ক্লাস-পরীক্ষার কথা তো মাথায়ই আনা যাবে না। তাই টিভির ক্লাসের উপরই আপাতত ভরসা করা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের এই টিভি ক্লাসে মনোযোগী হতে বলেছি।”