করোনাভাইরাস: আক্রান্তদের সিকিভাগই ২১-৩০ বছর বয়সী

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে দেশে এ পর্যন্ত যাদের পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের একটি বড় অংশ বয়সে তরুণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2020, 11:32 AM
Updated : 2 May 2020, 11:32 AM

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশই ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

তরুণদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার ‘আশঙ্কাজনক’ এই হারের পেছনে তাদের সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতাকেই ‘বড়’ কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী দুজনেই মনে করছেন, লকডাউন যথাযথভাবে না মানার কারণে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডা. মুশতাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইরাসে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। যে বয়সের লোকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, হয়ত তারা বাইরে বেশি যাচ্ছে। হয়ত পেশাগত কারণে বা অন্য কারণে। কাজেই এসব কারণে তরুণদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি হচ্ছে।”

ডা. শাহনীলা বলেন, “আমাদের দেশে তরুণ বয়সীদের বেশি হচ্ছে কেন? নিশ্চয় খেয়াল করে দেখেন, তারা লকডাউন মানছে না, ঘোরাফেরা করছে। হয়ত এটা একটা কারণ। অথচ এই গ্রুপেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। দেখা যাচ্ছে, কোনো রোগ বালাই নাই, কিন্তু হুট করে তারা অসুস্থ হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ মারাও যাচ্ছে।”

তথ্যসূত্র: আইইডিসিআর

আইইডিসিআর ‘সায়েন্টিফিক্যালি ডেটা অ্যানালাইসিস’ শেষ করলে বিভিন্ন গ্রুপের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কিংবা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মেনে অনেকে পথে বেরিয়ে এসেছেন, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না বলে গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি বলেন, “যে কোনো মুহূর্তে আপনি নিজেও কোভিড আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ সামাজিকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। আজকে যে নেগেটিভ আছে, কালকে সে পজিটিভ হবে না, এটার কোনো গ্যারান্টি আমরা দিতে পারছি না।”

আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৩ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের হার ৮ শতাংশ।

আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ শতাংশ ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী, ১৮ শতাংশের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ১৩ শতাংশ রোগীর বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর এবং ৮ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি।

আইইডিসিআরের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মৃতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ৬০ শতাংশ। এরপর ২৭ শতাংশের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৯ শতাংশের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৭ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

তথ্যসূত্র: আইইডিসিআর

মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৩ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, যে বয়স গ্রুপে সংক্রমণ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর ২ শতাংশের বয়স ১০ বছরের নিচে। তবে ১১ থেকে ২০ বছরের বয়সী আক্রান্তদের মধ্যে কেউ মারা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে আরও ৫৫২ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৭৯০ জন। এই সময়ে আরও ৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৫ জন হয়েছে।

আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশ এবং মৃতদের ৭৩ শতাংশই পুরুষ, বাকিরা নারী।