এক্ষেত্রে আপাতত অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ভাবনা থাকলেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করায় সবাইকে ইন্টারনেটে যুক্ত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের ভাষায় ২৬ মার্চ থেকে ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার পর এক রকম অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দেশ। অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু বন্ধ করে সবাইকে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশে মহামারীর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় গত ৯ এপ্রিল ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়।
এরই মধ্যে ‘সাধারণ ছুটি’ কয়েক দফা বাড়িয়ে আপাতত ৫ মে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থা দীর্ঘ হলে কিভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখা যায় তা নিয়ে গত গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেন।
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে (গুগল ক্লাসরুম, জুম, মিট প্রভৃতি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিচিত করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বলা হয়েছে ডিনদের নিয়ে মিটিংয়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো বিভাগ ক্লাস নিতে পারবে, আবার কোনো বিভাগ পারবে না। কারণ হচ্ছে এমন অনেক বিভাগ আছে, যেখানে শিক্ষকরা এ বিষয়ে দক্ষ নন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই প্রতি ছয় মাসে একটি করে সেমিস্টার সম্পন্ন করা হয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে একটি সেমিস্টার শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ বন্ধের কারণে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “এখন যে মহামারী চলছে, এটা কতদিন এভাবে চলবে বলা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে জুন পর্যন্ত থাকতে পারে। যদি জুন পর্যন্ত থাকে, তাহলে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, বছরের পরবর্তী সময়টাতে তা পুষিয়ে নিতে পারব।
“ছুটি কমিয়ে, সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করে নির্ধারিত সময়েই কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তবে এর চেয়ে বেশি সময় বন্ধ থাকলে তখন আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে।”
বিভিন্ন অনুষদেন ডিনরা মনে করছেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে ঈদের পর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যায়, তাহলে শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট সেমিস্টার বা বার্ষিক পদ্ধতির কোর্সগুলোর অতিরিক্ত ক্লাস ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
তবে যদি ক্লাস দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িকভাবে অনলাইনে ক্লাস চালু করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, “অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে হলে আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা চিন্তা করতে হচ্ছে। ক্লাস নিতে হলে সবার ডিভাইস ও ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন। সকল শিক্ষার্থীর সেই সক্ষমতা নেই।
“প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছে, তাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থা ভিন্ন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিডি (অভাবী)।এই মহামারীতে তাদের বেঁচে থাকার জন্য এখন সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী সাহায্যের জন্য আমাদের ফোন দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষকরা তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, অ্যালামনাই বা কল্যাণ ফান্ড থেকে এসব শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোজা শেষে আমরা হয়তো অনলাইনে শুধু ক্লাস নিতে পারব, তবে পরীক্ষা নেওয়া তো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরীক্ষা নিতে হবে। অনলাইনে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সাথে সম্পৃক্ত রাখা এবং সংশ্লিষ্ট সিলেবাস এগিয়ে রাখতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।”
কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে আমাদের যে মিটিং হয়েছে, সেটা সেই পর্যন্ত আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী মিটিং আমরা সে বিষয়ে পরামর্শ তুলে ধরব।”
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় হৃদয় ও তার বন্ধুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকুরদের ছাড়াও বিড়াল ও কাককেও খাবার দিয়ে থাকেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
“অনেক শিক্ষার্থী এখন রিমোট এরিয়ায় আছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগ সক্ষমতা নেই। তবে বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সরবরাহের চেষ্টা করছি। আমরা রবির (মোবাইল ফোন অপারেটর) সাথে কথা বলেছি, তারা শিক্ষার্থীদের সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট দিতে রাজি হয়েছে।পরবর্তী ডিনস মিটিংয়ে যদি সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে অন্যান্য অপারেটরের সাথেও কথা বলব।”
তিনি অনলাইন ক্লাসের সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, “অনলাইনে ক্লাসে নেওয়ার সুযোগটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত। জুমে ক্লাস রেকর্ড করা যায়, শিক্ষার্থীরা যারা ক্লাসে অংশ নিতে না পারবে, পরবর্তীতে সেটার রেকর্ডিং তাদের মেইল পাঠিয়ে দেয়া যাবে, যাতে সুবিধা মতো সময়ে তারা ক্লাস করে নিতে পারে।”
এ বিষয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পরবর্তী ডিনস কমিটির মিটিংয়ে বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা সম্ভাব্যতা যাচাই করে যে প্রক্রিয়া ও নীতি অনুসরণ করতে বলবেন আমরা সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
“এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর যে সময়টা আমরা পাব, সেটার কীভাবে সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করা যায়, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।”
শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হল, সেটা হয়তো তখন দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও বাড়তি শ্রম দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।