গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে ‘অপপ্রচার’ না করার আহ্বান ঔষধ প্রশাসনের

নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তে টেস্টিং কিট উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার যে অভিযোগ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2020, 12:02 PM
Updated : 27 April 2020, 01:06 PM

সোমবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি গণস্বাস্থ্যকে উদ্ভাবিত কিটের বিষয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কতটুকু এবং কিভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে তা তুলে ধরার পাশাপাশি কোনো ধরনের অপপ্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি না থাকার কারণও ব্যাখ্যা করেন মাহবুবুর রহমান।

মার্চে বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর স্বল্প খরচে নমুনা পরীক্ষার কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর ১৯ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এই কিট উৎপাদনের অনুমতি পায় তারা।

গত ১১ এপ্রিল এ কিটের নমুনা সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও আগের দিন কারখানায় যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক জটিলতায় তা পিছিয়ে যায়।

এরপর গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির হাতে কিটের নমুনা তুলে দেয় গণস্বাস্থ্য। কিন্তু ওইদিন সরকারের কোনো প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

ওই অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিট উদ্ভাবনে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা, ঔষধ প্রশাসন এবং করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগীর রক্তের নমুনা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাদের কিটের অনুমোদন দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের গড়িমসির অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে ঔষধ প্রশাসনে কিটের নমুনা জমা দিতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি বলে জানান।  

কিট তৈরিতে গণস্বাস্থ্যকে দেওয়া সহযোগিতার বিষয়ে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, মার্চ মাসের ১৮ তারিখে উনারা একটি চিঠি নিয়ে আসেন যে উনারা কিট উৎপাদন করবেন এবং সেজন্য কিছু রি-এজেন্ট আমদানি করতে চান। র‌্যাপিড কিটের প্রচলন তখন ছিল না এবং এখনও নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখনও র‌্যাপিড কিট ব্যবহারে সুপারিশ করেনি।

“তা সত্ত্বেও যেহেতু আমাদের দেশের একজন বিজ্ঞানী এটা আবিষ্কার করেছেন, এটা এখন ব্যবহার না করলেও পরবর্তীতে লাগতেও পারে। তাই ১৯ মার্চ আমরা মিটিংয়ে বসে রি-এজেন্ট আনার অনুমতি বা এনওসি দেই কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে। ট্রায়াল বেইজে তৈরি করার জন্য আমরা রি-এজেন্ট আনার অনুমতি দেই।”

অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি গত ২৮ মার্চ গণস্বাস্থ্যের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে তখনও যন্ত্রপাতি পুরোপুরি বসানো হয়নি দেখতে পায় জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, “আবার ৭ এপ্রিল উনাদের প্রতিষ্ঠানে গিয়েছে প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং দেখা গেল কিছু মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। তখন আমরা বললাম প্রডাক্ট নয়, ট্রায়াল বেইজে যেতে পারেন।

“আমরা এতদিন জানতাম যে উনারা অ্যান্টিবডি কিট তৈরি করবেন। কিন্তু গত দুই-তিনদিন ধরে দেখছি যে উনারা অ্যান্টিজেন দেখবেন। আমার জানা নাই, পৃথিবীর কোথাও রক্ত থেকে অ্যান্টিজেন দেখা হচ্ছে বলে।”

গত শনিবার গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “২৫ এপ্রিল উনারা একটা অনুষ্ঠান করেছেন এবং আমাদেরকে বলেছেনও। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি, এই কিট অনুমোদিত না, এটি হচ্ছে ট্রায়াল পর্যায়ের একটি কিট; এটা তো হ্যান্ডওভার অনুষ্ঠান হতে পারে না। এটি যখন পুরোপুরিভারে অনুমোদিত হবে, তখন বড় করে অনুষ্ঠান করেন।”

সেজন্যই ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদের নিষেধও করেছিলাম, কিন্তু তারপরও উনারা অনুষ্ঠানটি করেছেন এবং সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কে অনেক ধরনের…।”

রোববার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দলের অধিদপ্তরে আসার কথা স্বীকার করে মাহবুবুর রহমান বলেন, “কোন প্রতিষ্ঠানে উনারা এই কিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন তার নাম এবং চিঠি নিয়ে চলে গেলেন বিকাল ৩টার দিকে, কিন্তু ৪টার দিকে উনারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং দেখেছেন সেখানে কী ধরনের কথাবার্তা বলা হয়েছে, কিভাবে আমরা বাধার সৃষ্টি করছি বলে বলা হয়েছে।”

র‌্যাপিড টেস্ট কিটের বিষয়ে অনুমতির জন্য ঔষধ প্রশাসনে ১৮টি আবেদন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু ডাব্লিউএইচও রিকমেন্ড করে না, তাই র‌্যাপিড কিট আমাদের দেশে চালু হয়নি। বরং নির্ভরশীল টেস্ট কিট হল আরটি-পিসিআর এবং সেটি সারা দেশে ২৫টি জায়গায় চালু হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।

“তারপরও উনারা একটি টেস্ট ডেভেলপ করছেন, আমাদের দিক থেকে ঔষধ প্রশাসনের দিক থেকে উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম এবং এখনও আছি।”

রোববার গণস্বাস্থ্যের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের এই মুহূর্তে প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা খুব দরকার। গণস্বাস্থ্যের সহযোগিতা দরকার। এভাবে যদি অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে তথা প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আমি প্রত্যাখ্যান করছি এবং অনুরোধ করব, এ ধরনের অপপ্রচার যাতে না চালানো হয়।”

গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিট নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, “আমরা জানি সারা বিশ্বে এগুলো আছে আগে থেকেই, কিন্তু কোনো দেশই আস্থার সাথে এটা ব্যবহার করছে না। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ চেষ্টা করেছিল এই কিট ব্যবহারের, সে সমস্ত দেশেও কিন্তু বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। কারণ আমরা জানি এ সমস্ত কিটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফলস পজেটিভ কিংবা ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসে।

“এর ফলে আমার শরীরে করোনাভাইরাস নাই কিন্তু আছে বলল, তাহলে আমার মানসিক ও সামাজিক অবস্থা চিন্তা করতে পারেন? একইভাবে আবার হয়তো আছে কিন্তু নেগেটিভ ফলাফল আসল, তাহলেও বুঝতে পারছেন কি সমস্যা দেখা দিতে পারে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র‌্যাপিড কিটের অনুমোদন কোনো দেশের জন্য দেয়নি। কিছু কিছু দেশ দিলেও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর আমরাও দিতে চাচ্ছি না।”