করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানেও সাংবাদিক ছাঁটাই

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেই সাংবাদিক ছাঁটাই করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান; যা এই সংবাদকর্মীদের চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবও কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2020, 04:12 PM
Updated : 26 April 2020, 06:08 PM

মহামারীর মধ্যেই বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলাডটনেট থেকে এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিককে ছাটাই করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতা ও কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদের মালিকানাধীন এসএ টেলিভিশন থেকেও প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

এছাড়াও আলোকিত বাংলাদেশ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজেও ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক বাংলাদেশের খবর, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকাসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ছাপা বন্ধ রেখে শুধু অনলাইন সংস্করণ চালু রেখেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গণমাধ্যমের জন্যও সঙ্কট বয়ে এনেছে। তবে তারপরও সংবাদকর্মীদের ছাঁটাই না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পাটমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান গাজী টেলিভিশনে কোনো নোটিস ছাড়াই শুক্রবার দুইজন নিউজরুম এডিটরসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীকে চাকুরিচ্যুত করা হয় বলে জানা গেছে।

এর আগে মার্চের মাঝামাঝিতে সারাবাংলাডটনেট-এর বার্তা সম্পাদকসহ চারজন সংবাদকর্মীকে ইস্তফা দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য করায় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী সম্পাদকও ইস্তফা দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছি না। পরে কথা বলব।”

একই দিন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের পাঁচ সাংবাদিককে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেওয়া হয়।

দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী রফিকুল আলম বলেন, “সাত বছরে পত্রিকাটির পেছনে ৭০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাই অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান থেকে কর্তৃপক্ষ ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।

“যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের বকেয়া বেতনসহ সব ধরনের পাওনা পরিশোধের জন্য প্রস্তুত আছে। তারা পত্রিকার হিসাব শাখায় যোগাযোগ করে পাওনা বুঝে নিতে পারবেন।”

তার আগে মার্চের শেষ সপ্তাহে এসএ টেলিভিশনের ৩২ জন এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজের সাতজন সংবাদকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

এসএ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে না, যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের কর্মমূল্যায়ন করে আগেই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। তাদের প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো বকেয়া নেই।”

সারা দেশ থেকে এখন ১ হাজার ২৫০টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। সম্প্রচারে রয়েছে ৩০টি টেলিভিশন।

এভাবে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং ঢাকা রিপোর্টা্র্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীতে সকল স্তরের মানুষ শঙ্কিত, মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে। এই অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কর্মীদের চাকরিচ্যুতি কাম্য নয়।

“নিজের মালিকানাধীন গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রেখে, সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। অথচ প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অনেক গণমাধ্যম কর্মীকে তারা চাকরিচ্যুত করছে।”

ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে দুর্যোগকালে কাউকে চাকরিচ্যুত না করার জন্য। কিন্তু সেই অবস্থাতেও আমরা দেখতে পেয়েছি কিছু কিছু গণমাধ্যম অনেক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে।

“আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি অবিলম্বে চাকুরিচ্যুতির নোটিশ প্রত্যাহার করে তাদের পুনর্বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।”