সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান এইচআরডব্লিউর

বঙ্গোপসাগরে দুটি ট্রলারে থাকা কয়েকশ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2020, 06:29 PM
Updated : 25 April 2020, 06:30 PM

শনিবার এক বিবৃতিতে ওই রোহিঙ্গাদের ঊপকূলে আসার সুযোগ দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

এই রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত খাবার ও পানি ছাড়াই কয়েক সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

এইচআরডব্লিউ বলছে, বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন বলেছেন, তিনি এই রোহিঙ্গাদের দেশে প্রবেশ করতে দিতে চান না। কারণ সব সময় শুধু বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের দায়িত্ব নিতে বলা হয়।

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এদের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে।

করোনাভাইরাস মহামারীতে বহু বাংলাদেশির বিদেশ থেকে ফেরার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “অন্য কোনো দেশের নাগরিক বা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা আর আমাদের নেই।”

বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের কাঁধে বিরাট বোঝা চেপে আছে। তবে এটা নৌকায় ভাসমান শরণার্থীদের মরার জন্য সাগরে ঠেলে দেওয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উচিত ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে তারা যে আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করেছে তা ধরে রাখা।”  

এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী বোঝাই নৌযান ভিড়তে না দেওয়াকে ‘অমানবিক’ আখ্যায়িত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এতে শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

মালয়েশিয়া সম্প্রতি কয়েকশ রোহিঙ্গা আশ্রয় প্রার্থীবাহী নৌযান সাগরে ‘পুশব্যাক’ করেছে। রোহিঙ্গাদের নৌযান ভিড়তে দেবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে থাইল্যান্ড।

গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশর ঊপকূলরক্ষীরা রোহিঙ্গাদের একটি নৌযান উদ্ধার করেন, যেটা দুই মাস আগে মালয়েশিয়া ফিরিয়ে দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

প্রায় ৩৯০ জন অভুক্ত রোহিঙ্গা ওই নৌযানে ছিলেন, যাদের অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের নিচে। উদ্ধার হওয়ার আগে তাদের মধ্যে ১০০ জনের মতো না খেয়ে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সকে (এমএসএফ) ১৪ বছরে এক কিশোরী বলেছে, “অনেকে পা ফুলে যায় এবং প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। অনেকে মারা যান এবং তাদের সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। সাগরে আমরা নিঃসম্বল অবস্থায় ছিলাম, প্রতিদিনই মানুষ মরছিল। আমাদের মনে হচ্ছিল, আমাদের নরক থেকে আনা হচ্ছে।”

ওই নৌযান থেকে উদ্ধার হওয়াদের চিকিৎসা দেওয়া এমএসএফের একজন টিম লিডার বলেন, “তাদের হাড্ডিসার দেহে অনেকের শুধু প্রাণটাই অবশিষ্ট ছিল।”

এখন সাগরে ভাসা এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হিউম্যান রাইট ওয়াচের ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মানবতার মা’ বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন তার সরকার এই শরণার্থীদের বিষয়ে পিছু হটছে।

“বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারগুলোর নৌযানে ভাসমান এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো উচিত এবং এদের জন্য ও জনাকীর্ণ শিবিরগুলোতে থাকা শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত।”