রোজার দিনেও চকবাজারে হাঁক নেই, ডাক নেই

পুরান ঢাকার চকবাজারে এমন রোজা আর আসেনি; যেখানে কোনো ইফতারের পসরা নেই, ক্রেতাদের ভিড় নেই; নেই হাঁক-ডাক।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2020, 12:15 PM
Updated : 25 April 2020, 01:39 PM

নতুন করোনাভাইরাস ঠেকাতে স্থবির দেশে চকবাজারও হয়ে রয়েছে স্থবির; পুলিশের নির্দেশনার কারণে ২টার পর খোলা থাকেনি কোনো খাবারের দোকানই।

প্রতি রোজায় চকবাজারের নানা ইফতারের স্বাদ নিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থান তো বটেই, রাজধানীর বাইরে থেকে মানুষও ভিড় করত।

শাহী হালিম, বোম্বে জিলাপী, দই বড়া, নানা রকম শরবত, হরেক রকমের কাবাব মুখরোচক নানা খাবারের সঙ্গে চকবাজারে পাওয়া যেত খাসির রোস্টও। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল কয়েক ধরনের খাবার মিশিয়ে তৈরি ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।

এসব খাবার নিয়ে বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পরও মেতে থাকত চকবাজার।

অন্যবার রোজার প্রথম দিনেই এমন জমজমাট থাকত চকবাজারের ইফতারির বাজার (ফাইল ছবি)

এবার কোনো দোকান ছিল না।

চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “এবছর চকবাজারের কোনো ইফতারি দোকান নেই আর ফুটপাতে কাউকে বসতেও দেওয়া হয়নি। অলি-গলিতেও কাউকে বসতে দেওয়া হবে না।”

তবে চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনের রাস্তায় দু’পাশের কিছু মিষ্টির দোকান দুপুর ২টা পর্ন্ত কিছু খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে।

এবার প্রথম রোজায় ফাঁকা চকবাজার

প্রথম রোজাকে সামনে রেখে একটু বেশি সমুচা, সিংগারা, জিলিপি তৈরি করেছিল চকবাজারের আলাউদ্দিন সুইটমিট।

কিন্তু দুপুর ২টার মধ্যে সব মালামাল বিক্রি হয়নি বলে জানান ওই দোকানের মালিক মো. মারুফ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশাসন দুপুর ২টার মধ্যেই সব বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এতে আপত্তি নেই। মানুষ যত কম বের হবে, তত রোগের বিস্তার কম হবে। আগে মানুষের জীবন।”

রোজায় ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর থাকত চকবাজার (ফাইল ছবি)

পুরান ঢাকার অন্য স্থানগুলোতেও একই চিত্র।

কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “কোথাও কোনো ইফতারির খাবার নিয়ে বসার সুযোগই নেই। ওষুধের দোকান শুধু খোলা থাকে। সন্ধ্যা ৬টার পর তো কাউকে বাইরে থাকতে দিচ্ছি না। ইফতারের সময় ৬টা ২৮ মিনিটে। সুতরাং বাইরে ইফতারির পসরা নিয়ে বসার সুযোগ নেই।”

ছোট কাটারার হেকিম হাবিবুর রহমানে বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, অন্যবার তাদের বাসার সামনের সড়কে অন্তত ৫০টি ইফতারির দোকান বসত, কিন্তু এবার একটি দোকানও নেই।

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অনেকেই দোকানের ইফতারির উপরই নির্ভর করেন। এমনই একজন

পাটুয়াটুলীর নবাববাড়ির মোস্তাফিজুর রহমান। ইফতারে শাহী হালিম, টানা পারাটা, সুতি কাবাব, দইবড়া, বোম্বে জিলাপি না হলে তার চলেই না। কিন্তু এবছর পড়লেন বিপাকে।

চকবাজারের শাহী জিলাপি,একেকটির ওজন প্রায় এক কেজি (ফাইল ছবি)

মোস্তাফিজুর শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“গতকালও (শুক্রবার) বিভিন্নস্থানে ফোন করেছি এসব খাবার তৈরি করে কি না? কিন্তু সবাই না করেছে।”

তাহলে এখন কী দিয়ে ইফতার করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ফলমূল আর ঘরের তৈরি খাবার দিয়ে।”

নয়াবাজারের জিন্নাহ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক জিন্নাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে তার ২৬ জন কর্মচারীর সবাই গ্রামে চলে গেছে। ফলে হোটেল পুরোপুরি বন্ধ।

নারিন্দার বাসিন্দা নবাবপুরের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক বছর ধরে বাসায় ইফতার তৈরি করা হয়,তবে কিছু আইটেম চকবাজার থেকে আনা হত। কিন্তু এবার আর সেটা হচ্ছে না। কিছুই করার নেই।”