ভিন্ন আঙ্গিকে তারাবিতে শুরু হল রমজান

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনসমাগম বন্ধের পাশাপাশি ঘরে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানানো হলেও মসজিদগুলোতে তারাবির নামাজ জামাতেই হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2020, 05:39 PM
Updated : 24 April 2020, 05:43 PM

কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবের পর মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা ১০ জনে সীমাবদ্ধ করা হলেও তারাবির জামাতে এই সংখ্যা দুজন বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পর বিভিন্ন দেশ এমনকি সৌদি আরবও মসজিদে জামাত বন্ধ করে দেয়।

কেননা এই রোগের কোনো প্রতিষেধক না থাকায় মানুষে মানুষে সংস্পর্শ এড়ানোই সংক্রমণ এড়ানোর একমাত্র পথ। আর কয়েকটি দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অনেকের জমায়েত ভাইরাসের বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সৌদি আরবে সব মসজিদ বন্ধ রেখেছে রমজানেও। কেবল মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে সংক্ষিপ্ত তারাবির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তাতে শুধু ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ মসজিদের কর্মচারিরা অংশ নেবেন; সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদে ঢুকতে পারবেন না। নামাজ ২০ রাকাতের পরিবর্তে হবে ১০ রাকাত।

বাংলাদেশে প্রাদুর্ভাবের পর জুমার নামাজে বাইরের মুসল্লিদের ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ ১০ জনকে নিয়ে জামাত চালু রাখতে বলা হয়।

তারাবির নামাজ সবাইকে ঘরে পড়তে অনুরোধ আসে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতার কাছ থেকেও।

এরপর মধ্যে শুক্রবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে রমজানে মসজিদে তারাবির জামাতে সর্বোচ্চ ১২ জনের অংশগ্রহণের নির্দেশনা আসে।

এতে বলা হয়, এশার জামায়াতে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব, খাদিম ও দুই হাফেজসহ সর্বমোট ১২ জন অংশ নিতে পারবেন। এশার জামায়াত শেষে এই ১২ জনই মসজিদে তারাবির নামাজ পড়বেন।

“অন্য মুসল্লিগণ নিজ নিজ ঘরে এশা ও তারাবীহ নামাজ আদায় করবেন। সকলেই ব্যক্তিগতভাবে তিলাওয়াত, যিকির ও দুআর মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করবেন।”

এবিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব মসজিদে ইমাম, হাফেজ, খতিব ও খাদেম মিলিয়ে ১২ জন হবে না, সেসব মসজিদে বাইরে থেকে কে কে নামাজ পড়বেন, তা মসজিদ কমিটি ঠিক করবে।”

দেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।

শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”আলেম সমাজের মত হচ্ছে, সংক্রমণ রোধে মসজিদে না গেলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু মসজিদ বন্ধ করার পক্ষে নই আমি।

”ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদেম আছেন, তারা কয়েকজন মুসল্লি মিলে নামাজ আদায় করবেন, তাতে ফরজ আদায় হয়ে যাবে।”

তারাবি শুরুর প্রথম দিন শুক্রবার রাতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি মসজিদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরাবরের মতো একজন হাফেজের ইমামতিতে খতম তারাবি এবার অনেক মসজিদে হচ্ছে না। স্বল্প পরিসরে ’সুরা তারাবি’ পড়া হচ্ছে।

অন্যবারের মতো তারাবির জন্য মুসল্লিদের দলে দলে মসজিদের পথে ছোটার চিত্র এবার নেই।

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদও রমজান মাসে বন্ধই থাকছে বলে জানিয়েছে জেরুজালেম ইসলামিক ওয়াকফ কাউন্সিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়াকিন ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক রিসার্চের প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমান বলেন, তারাবির নামাজ মসজিদ কিংবা বাড়ি- দুই জায়গাতেই পড়া যাবে। এতে সওয়াবের কমতি হবে না।

ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইবাদতের প্রতি জোর দিয়ে সাদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক সিএনএনকে বলেন, ”এই মুহূর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে নামাজ আদায় করা উচিত। কিন্তু মানুষের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিকার অর্থে খুবই কষ্টকর। কারণ তারা মসজিদে নামাজ পড়ে অভ্যস্ত।”

পাকিস্তানে ধর্মীয় নেতাদের চাপের মুখে রমজানে মাসে মসজিদগুলোতে জনসমাগমের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে সরকার। যদিও ভাইরাস ঠেকাতে সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পক্ষে মত দিয়ে আসছিলেন দেশটির চিকিৎসকরা।

ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়াসহ বিভিন্ন দেশ মসজিদ বন্ধ না করলেও ঘরে থেকে নামাজ আদায়েরই আহ্বান জানিয়েছে আসছে সেসব দেশের সরকার।