কোভিড-১৯: মত প্রকাশ বাধাহীন করার আহ্বান আর্টিকেল নাইনটিনের

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের মুখ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটি ন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2020, 04:19 PM
Updated : 24 April 2020, 04:27 PM

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, এসব পদক্ষেপ ‘স্পষ্টতই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকারের লঙ্ঘন’। তাছাড়া এর প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাপনার সঙ্কটকে আরও নাজুক করবে।

শুক্রবার সংগঠনটির ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

একইসঙ্গে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম কোন প্রতিষ্ঠানে কত সংখ্যক সরবরাহ করা হয়েছে, তা ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে’ প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন।

বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ, যা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

প্রথমে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ করা হয়। এরপর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের খাবার সঙ্কটের কথা গণমাধ্যমে এলে নার্সদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় বারণ আসে।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, এন-৯৫ মাস্কসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবু তাহেরকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।

গত ২৩ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও কোনো বিবৃতি দিতেও নিষেধ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আর্টিকেল নাইটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, “আর্টিকেল নাইনটিন লক্ষ্য করেছে, এই বিপুল পরিমাণ পিপিই বিতরণের সরকারি তথ্যের বিপরীতে দেশজুড়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছেন, কোনো পিপিই তারা পাননি। যারা পেয়েছেন, তারাও পিপিইর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা উপযুক্ত কর্মপরিবেশ না থাকার কথা জানিয়েছেন, যা গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

“স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন যৌক্তিক উদ্বেগ প্রশমনের পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি স্পষ্টতই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকাররে লঙ্ঘন। তাছাড়া এর প্রতিক্রিয়া করোনা ব্যবস্থাপনার সঙ্কটকে আরো নাজুক করবে। কারণ, সুরক্ষা উপকরণ ও সেবাদানের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে চিকিৎসকরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন, তেমনি অসুরক্ষিত অবস্থায় বহু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকরাও অন্য রোগীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন।”

ফারুখ ফয়সল ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থে’ চিকিৎসক আবু তাহেরকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিস এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের জারি করা নোটিস প্রত্যাহারের আহবান জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ লাখ ১৬ হাজার ১৯০টি পিপিই সংগ্রহ করেছে তারা। এর মধ্যে ১২ লাখ ৪২ হাজার ৮টি পিপিই বিতরণের পর এখন মজুদ আছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ১০২টি।

আর্টিকেল নাইটিন বলছে, “অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সারাদেশে সরকারি চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৮২ হাজার ৫১ জন। এ হিসেবে একজনের গড়ে অন্তত ১২টি পিপিই পাওয়ার কথা।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে’ কোন প্রতিষ্ঠানে কতসংখ্যক পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে, সেই তালিকা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন।

ফারুখ ফয়সল বলেন, “করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে কোথায় কী পরিমাণ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে তা স্বাস্থ্যকর্মী তথা দেশের সাধারণ মানুষ জানতে চাইতেই পারেন।

“আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তথ্যের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজনও এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। করোনার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা যেমন ব্যাহত হবে তেমনি সঠিক তথ্যের অভাবে ভুল তথ্য এবং ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।”