স্বল্প পরিসরে আদালত চালুর উদ্যোগ

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও স্বল্প পরিসরে আদালত চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2020, 02:39 PM
Updated : 23 April 2020, 02:41 PM

এ সিদ্ধান্তের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি নিতে ছুটির মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত বসবে; হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিও আদালত পরিচালনা করবেন।  

এছাড়া নিম্ন আদালতে সপ্তাহে দুই দিন জরুরি জামিন শুনানি নেওয়া হবে। তবে কোন দুই দিন শুনানি হবে, তা জেলা ও মহানগরের দায়রা জজ ও মুখ্য বিচারিক হাকিম ঠিক করবেন।

এদিকে সঙ্কটকালীন এই পরিস্থিতিতে ই-আদালত পরিচালনার ক্ষেত্র তৈরি করতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগও নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। 

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ যে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে, তা ধাপে ধাপে ৫ মে পর্যন্ত বেড়েছে। আরও বাড়বে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

মানুষকে ঘরে রেখে ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোই সাধারণ ছুটির উদ্দেশ্য; কারণ এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় বলে জনসমাগম ঘটে, এমন সব কিছুই এখন বন্ধ। আদালতও ৫ মে পর্যন্ত ছুটি।

দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থী, বন্দি ও আসামিরা জেলহাজতে মানবেতর জীবনযাপন করছে; এছাড়াও আইন পেশা স্থবির হয়ে পড়ায় আদালত আংশিকভাবে খুলে দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।

তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর  স্বাক্ষরিত দুটি আলাদা নোটিসে সীমিত আকারে আদালত চালুর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

একটি নোটিসে বলা হয়েছে, “উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয় সমূহ শুনানির নিমিত্ত ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।

“এছাড়া ছুটিকালীন সময়ে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সকল অধিক্ষেত্রের অতীব জরুরী বিষয় সমূহ শুনানির নিমিত্তে হাই কোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”

আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুন বিষয়ে বিচারপতিরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে জানানো হয়েছে।

অন্য নোটিসে দেশের নিম্ন আদালতে সপ্তাহে দুই দিন সীমিত আকারে জরুরি জামিন শুনানির সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

“উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে এবং মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজকে ছুটিকালীন সময়ে তার সুবিধা মতো প্রতি সপ্তাহে যে কোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল।”

একই নির্দেশ দেওয়া হয় সব মুখ্য বিচারিক হাকিম, মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিমকেও।

নোটিসে আরও বলা হয়েছে, “যে সব ফৌজদারি মামলায় আসামিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সব মামলায় উচ্চ আদালত হতে অধস্তন আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের শর্তে জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সব মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা/স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করা হয়েছে, সে সকল মামলার আদেশের কার্যকারিতা আদালত খোলার তারিখ হতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে। ছুটিকালীন সময় উক্ত মামলা সমূহের বিষয়ে কোনো আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে না।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় রেখে এসব জামিন শুনানিতে কিছু বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হয়েছে।

নোটিসে বলা হয়েছে, “একটি মামলার জামিন শুনানিতে কেবল একজন বিজ্ঞ আইনজীবী অংশগ্রহণ করবেন। আদালত প্রাঙ্গণ এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে।”

জামিন শুনানিতে কারাগারে থাকা আসামিদের প্রিজনভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালতে হাজির না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নোটিসে।

জেলা ও মহানগর আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে আইনজীবী সমিতিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা ও দায়রা জজ কিংবা মহানগর দায়রা জজ।

ই-আদালত চালুর উদ্যোগ

ই-আদালত পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস ও ইউএনডিপি বাংলাদেশকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারিগরি সুবিধা এবং ও বিচারক, আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। 

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর  এ বিষয়ে আরেকটি নোটিস জারি করেন।

সে নোটিসে বলা হয়েছে, “গত ২০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস’র ৬৮তম সভার সিদ্ধান্তে কমিটি হাই কোর্ট বিভাগ এবং দেশের সকল অধস্তন আদালতে ভিডিও/অডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম সীমিত আকারে পরিচালনার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় সমীপে সবিনয়ে অনুরোধ করেন। কমিটি সিদ্ধান্তে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ইউএনডিপি-বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় করিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।

“এমতাবস্থায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস কমিটি এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সুবিধা প্রদান এবং দেশের সকল জেলা সমূহে উপস্থিত হয়ে বিচারক, আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে-কলমে এবিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হল।”