এন-৯৫ এর মোড়কে সাধারণ মাস্ক তদন্তে কমিটি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে সাধারণ মাস্ক দেওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2020, 07:13 PM
Updated : 20 April 2020, 07:13 PM

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নির্দেশনা দেন। তার পরে রাতেই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হল।

রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মো. আবু রায়হান মিঞা স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “উপর্যুক্ত বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকাস্থ মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে এন-৯৫ ব্র্যান্ডের মোড়কে সাধারণ ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ পরিস্থিতিতে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সিএমএসডি ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিলে প্রতিষ্ঠানটি একটি ব্যাখ্যা প্রদান করে। 

“আলোচ্য অভিযোগ এবং ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির যথাযথ অবস্থা অনুসরণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কমিটি নির্দেশক্রমে গঠন করা হল।”

তিন সদস্যের এই কমিটিতে আছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. সাঈদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল-১ শাখার উপপরিচালক মো. আমিনুর রহমান এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব (ক্রয় ও সংগ্রহ) হাসান মাহমুদ।

কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “কমিটি বর্ণিত অভিযোগের আলোকে চাহিদা, স্পেসিফিকেশন, সংগৃহীত পরিমাণ, সরবরাহকৃত নিম্নমানের মাস্কের পরিমাণ, সিএমএসডিতে নিম্নমানের মজুদ মাস্ক (যদি থাকে) ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন পূর্বক সুস্পষ্ট মতামত দেবেন। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করবেন।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী, রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক।

ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা; বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমেও আসে।

জেএমআই নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালককে চিঠি দেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে জন্য এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’।

হাসপাতালে কীভাবে ‘ভুল মাস্ক’ গেল সে বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিএমএসডি পরিচালক।

সেখানে বলা হয়েছে, “সিএমএসডি কোনো দেশীয় চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নিকট এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করে নাই। বাংলাদেশি চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জেমএআই কোভিড-১৯ সংক্রমণের পূর্বে থেকে হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার, সাধারণ মাস্ক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স/ কোয়ালিটি সার্টিফিকেট/ ছাড়পত্র অনুযায়ী সিএমএসডিকে সরবরাহ করে আসছে।

“উক্ত কোম্পানি যে মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে, সে মোড়কগুলোতে এন-৯৫ মুদ্রিত ছিল। সিএমএসডি ভুলক্রমে সাধারণ মাস্ক হিসেবেই পণ্যগুলো সরবরাহ করে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়েই নজরে আসে। সিএমএসডি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহকারী কোম্পানিকে মাস্কগুলো ফেরত দেয়। কেন এমন মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে তার লিখিত জবাব চায়।”

তবে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নজরদারি কঠোর করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সকালে বলেন, “কেউ যদি এ রকম কিছু করে থাকে … বা এর সাপ্লায়ার কে… আমি শুধু বললাম, মহানগর হাসপাতালে এটা গেছে। বাবুবাজারের যে হাসপাতালটা .. এটা তো করোনাভাইরাসের জন্য ডেডিকেটেড। তো এরকম কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় যদি হয়, এটা তো ঠিক না। 

“আপনারা যাদেরকে এনগেজড করেন, যাদেরকে ব্যবসাটা দেন বা যাদেরকে নেয় বা সাপ্লাই দেয়, তারা সঠিকটা দিল কি না। বক্স তো ঠিক আছে, কিন্তু বক্সের ভিতরের জিনিসগুলি ঠিক আছে কি না আমার মনে হয়, নজরদারি বাড়ানো দরকার…বা যিনি রিসিভ করবেন, তিনি যেন দেখেশুনে এটা রিসিভ করেন। খালি আমি এটুকু বলতে চাই।”