বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়: প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজারে বেচাকেনা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2020, 07:33 AM
Updated : 20 April 2020, 01:19 PM

সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে; যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোনো বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। বড় খোলা জায়গায় যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার পরিচালনা করতে হবে।

করোনাভাইরাসের মহামারীর চলমান পরিস্থিতে রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। …”

“এখন ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে, আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সাথে অন্য যা প্রয়োজন-তরিতরকারি, ফলমূল যে যা পারবেন উৎপাদন করবেন- আমরা সেটাই চাই।”

সরকারের দেওয়া ধান সংগ্রহের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “সাধারণত বোরোতে আগে আমরা যা নিতাম তার থেকে অনেক বেশি আমরা এখন নিচ্ছি। এখন আমরা ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান,১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করব।

“এটা আমরা ক্রয় করব।…তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব।”

সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের দেওয়া অর্থ ও ভাতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাছাড়া আমরা ১০ টাকা কিলোতে ওএমএস চালু করেছি। সেটা আমরা ৫০ লক্ষ লোকের রেশন কার্ড আছে যারা এই ১০ টাকায় ওএমএস এই চালটা কিনতে পারে।”

ছবি: পিআইডি

যারা সরকারে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, অথচ কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না তাদের তালিকা তৈরি করে ৫০ লাখ নতুন রেশন কার্ড করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।

“ওএমএসে চালটাও ১০ টাকা দিয়েছি সেখানে আরো ৫০ লক্ষ পরিবারের জন্য আমরা কার্ড করে দেব। সেই তালিকাও আমরা করতে বলেছি যেটা একেবারে ডেটাবেইজ করা থাকবে।

“তাতে আমরা হিসেব করে দেখেছি, প্রায় ৫ কোটি মানুষ অর্থাৎ একটা পরিবারকে যদি আমরা চার সদস্য বা পাঁচ সদস্য হিসেবে ধরি তাহলে কিন্তু ৫ কোটি মানুষই কিন্তু এর উপর পাবে। অর্থাৎ প্রতিটা মানুষ যেন অন্তত খাদ্য পায়।”

কোভিড ১৯ মোকাবেলায় সারাদেশে ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার মধ্যেও শ্রমজীবি মানুষরা যাতে ধান কাটার কাজ করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের খাদ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই করোনাভাইরাসের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য মন্দা সৃষ্টি হবে আগামীতে হয়ত বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের মজুদ রাখতে পারি তাহলে আমরা সেই দুর্ভিক্ষে পড়ব না বরং আমরা অনেককে সাহায্য করতে পারব। আমাদের সেই ব্যবস্থা এখন থেকে নিতে হবে।”

কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই যে যা পারেন কিছু চাষ করেন, কিছু তৈরি করেন বা এই যে ধান কাটার পরেও সেখানে আরেকটা ফসল কি করা যায় আমাদের করা উচিত।”

মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় প্রণোদনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার উপরে ইতিমধ্যে আমরা প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। আমরা কেন করেছি এটা? এইজন্য করেছি, আমাদের অর্থনীতিটাকে সচল রাখার জন্য।

“কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না, সব সেক্টরের জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।”

কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটা তহবিল আমরা গঠন করে দিয়েছি। সেখানে আমাদের ক্ষুদ্র মাঝারি বা মধ্যম যত ধরনের… কৃষি, মৎস্য, ডেইরি, পোল্ট্রিসহ বিভিন্ন খাতে… সবকিছুতেই ৪ শতাংশ সুদ হারে ঋণ নিতে পারবে। আর আমাদের বর্গাচাষি যারা, তাদের আমরা বিনা জামানতেও কৃষি ঋণ দিয়ে থাকি। সেগুলো অব্যাহত থাকবে। এখানে আমরা প্রায় ৯৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকিও দিচ্ছি।”   

সরকার প্রধান বলেন, “আমরা যে প্রণোদনাটা দিয়েছি এটা শুধু এই বছরের জন্য না, আগামী তিন বছরে আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখে এটা আমরা অব্যহত রাখব, যাতে দেশের মানুষ কষ্ট না পায়।”

মহামারীর কারণে বিশ্বে দুর্ভিক্ষের শঙ্কাও যে আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশকে বাঁচানো এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দেশকে রক্ষা করা- এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”  

আর সেজন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “দুর্যোাগ আসে, দুর্যোগি মোকাবেলা করতে হয়। আর সেই মোকাবেলা করবার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। শুধু আমি জনগণের সহযোগিতা চাই। এইজন্য যে এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সকলকে একটু সচেতন থাকা… সেটা একান্তভাবে অপরিহার্য। আমি সেজন্য সবাইকে আবারও বলব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা যাচ্ছে, সেগুলো আপনারা যথাযথভাবে মেনে নেবেন।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ এখন অনেকটা সীমিত হয়ে আসায় একেক জেলায় একেকজন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে ত্রাণ বিতরণ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজগুলো দেখভাল করে তারা প্রতিবেদন দেন।

সবাইকে সাহসের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একাত্তর সালের কথা সবাই চিন্তা করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়… সমগ্র বাঙালি জাতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ কিছুই ছিল না। কোনো মতে খালি পায়ে একেবাবে লুঙ্গি পড়ে মালকোচা মেরে হাতে অস্ত্র নিয়ে তারা সেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।

“কাজেই এভাবেই কিন্তু মনে সাহস নিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এবারও এই করোনাভাইরাস থেকেও সেই সাহস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখানেও বাঙালিকে জয়যুক্ত হতে হবে। সেই চিন্তা ভাবনা নিয়েই সকলকে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা এই দুর্যোগ থেকে খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসতে পারব।”  

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ‍ভিডিও কনফারেন্সের গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।