ঢাকায় কাঁচাবাজারে ভিড় কমছে না

করোনাভাইরাসসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও রাজধানীর অধিকাংশ কাঁচাবাজারে গাদাগাদি করেই মানুষকে কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে, যা রোগ বিস্তারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

সুমন মাহমুদজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2020, 12:16 PM
Updated : 19 April 2020, 12:16 PM

দেশে কোভিড-১৯ রোগের মহামারী ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে ওষুধের দোকান বাদে শুধু কাঁচাবাজারই খোলা রয়েছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে না বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, তেমনি নানা নিয়ম করে কাঁচাবাজারে ভিড় কমানো যাচ্ছে না।

একমুখী প্রবেশপথ, দোকান-পাটের সামনে গোলাকার চিহ্ন এঁকে দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতাদের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানার প্রবণতা খুব কম দেখা যাচ্ছে।

রোববার শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ রেলগেইট বাজার, সেগুন বাগিচা কাঁচা বাজার, এলিফ্যান্ট রোড কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ব্যাপক মানুষের সমাগম।

শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে ‘একমুখী পথ’ চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ এক পথ দিয়ে ঢুকতে হবে, বের হতে হবে আরেক পথ দিয়ে ।

শান্তিনগর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তা আফসার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শক্রমেই আমরা এই বাজারে ‘একমুখী রাস্তা’ চালু করেছি। ‘প্রবেশ’ ও ‘বাহির’ হওয়ার গেইটে নিরাপত্তাকর্মীও বসানো হয়েছে।

“এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাবে এবং যারা বাজারে আসবেন তারা নিজেরা সুরক্ষা পাবেন। এজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।”

সকাল ১১টার দিকে শান্তিনগর বাজারে বের হওয়ার পথ দিয়ে ঢুকতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীর বাধার মুখে পড়েন রাশেদ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি।

নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “স্যার, এই পথটি বের হওয়ার পথ। আপনাকে ওই পথ দিয়ে যেতে হবে। ওটা প্রবেশ পথ।”

তখন কেউ বের হচ্ছিল না বলে রাশেদ অনুরোধ করেন, “এ্খন তো কেউ বের হচ্ছে না, আমি চলে যাই। মুদির দোকানটা এখানেই।”

নিরাপত্তা কর্মী তখন বললো, “স্যার সরি। এখান দিয়ে প্লিজ যাওয়া যাবে না। আপনার কাছে হাত জোড় করে বলছি, ওখান দিয়ে যান।”

পরে রাশেদ ঘুরে গিয়ে ‘প্রবেশ’ পথ দিয়ে বাজারে ঢোকেন।

একটু রসিকতার সুরেই তিনি বলেন, “বাজার করতে এসেছি, সেখানেও যত সব নিয়ম। এমনিতে বাজারে মানুষজন যেভাবে ঢুকছে, তাতেই ভয়ে আছি। দ্রুত ডাল-চিনি-ছোলা-খেসারি-সয়াবিন তেল নিয়ে চলে যাব বাসায়। সেটাও দেরি হচ্ছে।”

কাঁচাবাজারের লোকসমাগম ঠেকাতে মালিবাগ রেল গেইটের বাজারের বাইরে সড়কের এক পাশেই বসানো হয়েছে মাছ ও সবজির অস্থায়ী দোকান।

বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তা আনিসুর রহমান সুরক্ষা পোশাক পড়ে হ্যান্ডমাইক হাতে বলছিলেন, “কেউ বাজারে ভিড় করবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাজারের ভেতরে না ঢুকের রাস্তায় পাশেও তরি-তরকারি-মাছের দোকান বসেছে। এখান থেকে কিনুন। দ্রুত বাজার করে বাসায় চলে যান।”

খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা কামরুজ্জামান বাবু বলেন, “কাঁচাবাজারে যেভাবে মানুষজন গাদাগাদি করে এসে বাজার করছেন, এটা ঠিক না। গ্যাদারিং যেখানে বেশি সেখানেই সংক্রমিত হওয়ার ভয় বেশি। আমাদেরকে বিষয়টা বুঝতে হবে।

“শুধু শুধু সব কিছুর জন্য সরকারকে দায় দিলে লাভ নেই। এই দেখুন না, বাজারে ভিড় বেশি বলে রাস্তার একপাশে হাটের মতো বাজার বসেছে। আমি ভেতরে না গিয়ে এখান থেকে বাজার সদাই করছি। অযথা বেশি মানুষের ভেতরে ঢোকার প্রয়োজনটা কী?”

মালিবাগ এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে মালিবাগ বাজার ছাড়াও রেলগেইট থেকে শুরু করে রেললাইন জুড়ে কাঁচাবাজার রয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল মাছ বাজার, মুরগির বাজার, তরকারির বাজারে গাদাগাদি অবস্থা।

অথচ এই মালিবাগের কাছে গুলবাগে কয়েকজন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার কয়েকটি বাসা লকডাউন রয়েছে।

স্থানীয় আবু গিফারী কলেজের শিক্ষার্থী অমলেশ দাশ বলেন, “আগের মতোই গায়ে গা ঘেঁষে কাঁচাবাজারে কেনা-কাটা করতে হয়। কারণ রেললাইন ঘেঁষা এই অস্থায়ী বাজারের পথও সরু। কিছু করার নেই। মানুষ জন আতঙ্ক নিয়ে বাজার করতে আসছেন।

“এই রকম অবস্থা হলে সামাজিক দূরত্ব আপনি কীভাবে বজায় রাখবেন? আবার ধরুন আপনি বাজারে একজন একজন করে যদি প্রবেশ করান, তাহলে দেখবেন দুপুর ২টা পর্য়ন্ত ৫০ জনও বাজার করতে পারবেন না। তাহলে অন্যরা কি না খেয়ে থাকবে?”

বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সড়কের একপাশে বাজার বসানোর প্রস্তাব করেন এই কলেজ শিক্ষার্থী।

এলিফ্যান্ট রোড়ের কাঁচাবাজারে গিয়েও দেখা গেছে লোকসমাগমের চিত্র। ভিড় কমাতে সেখানে কাঁচা বাজারের একটি অংশ রাস্তার ওপর বসানো হয়েছে। ফলে গাদাগাদি কম ছিল।

বাজার করতে আসা কাঁটাবন এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আলম বললেন, “বাচ্চাদের জন্য ভালো মাছ ও গুরুর মাংস কিনতে এসেছি। কিন্তু যেভাবে মানুষজনের ভিড় তাতে ভয়ে ভয়ে আছি। এভাবে বাজার করাটা আসলেই রিস্কি।

“কিন্তু বিকল্পও তো কিছু দেখছি না। কাঁচাবাজার বন্ধ করে দিয়ে অন্য কোনো ব্যবস্থা চিন্তা করা উচিত।”

তবে ধানমণ্ডির বিভিন্ন গলিতে দেখা গেছে ঠেলা গাড়িতে তরি-তরকারি, মাছ বিক্রি হতে।

সেট্রাল রোডের গলিতে এক এপার্টমেন্ট বাসিন্দা শিক্ষক কেয়া চৌধুরী ঠেলাগাড়িওয়ালাকে ডেকে বাজার করলেন।

তিনি বলেন, “এখন কাঁচাবাজার ডেনজারেস পয়েন্ট। লকডাউনের পর ঠেলাগাড়িতে করে যারা বিক্রি করছে, তাদের কাছ থেকেই কিনছি। তাজা জিনিসপত্র পাওয়া যায়, একটু দাম বেশি- এই যা। তারপরেও অনেক সেইভ থাকা যায়। আগে তো জীবন, তারপর অন্যকিছু।”