মহামারীর মধ্যে হল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম সংসদ অধিবেশন

মহামারী নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যে সংবিধানের ‘নিয়ম রক্ষায়’ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের সংসদ অধিবেশন হয়ে গেল।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2020, 01:14 PM
Updated : 18 April 2020, 02:17 PM

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার বিকেল ৫টায় সংসদের সপ্তম অধিবেশন শুরু হয়, যা চলে দেড় ঘণ্টারও কম সময়।

অধিবেশনের সমাপনী সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে শোনানোর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আসুন আমরা ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে এই সংকট উত্তরণ ঘটাই। আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, নিয়মিত ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করি। নিজ বাড়িতে অবস্থান করি। আমাদের সকলের দায়িত্বশীল আচরণ এই সংকট উত্তরণের পথ সহজ করবে।”

নভেল করোনাভাইরাসে প্রাণ হারানোসহ সাম্প্রতিক সময়ে মারা যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য শনিবার জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংসদ সদস্যরা। ছবি: পিআইডি

পরে স্পিকার রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি তার আদেশে বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আহূত একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসমাগম পরিহার করার জন্য জনস্বার্থে …সমাপ্তি করিতেছি।”

সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার সংসদ বসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যে শনিবার জাতীয় সংসদে বসে নিয়ম রক্ষার অধিবেশন। সংসদ সদস্যরা মাস্ক-গ্লাভস পরে অংশ নেন এ অধিবেশনে। ছবি: পিআইডি

অধিবেশনে অংশ নেওয়া প্রধানমন্ত্রীসহ সব সদস্যই মাস্ক-গ্লাভস পরে ছিলেন। অনেকের মাথায় সার্জিকাল টুপিও দেখা গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একজন থেকে আরেকজনের ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তুলনামূলক কম সংখ্যক সদস্য অধিবেশনে অংশ নেন। সংসদ কক্ষে আইন প্রণেতাদের আসনের মাঝে দূরত্বও দেখা গেছে।

কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন ৬০ জন বা তার সামান্য কিছু বেশি সদস্য সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বলে আগেই সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য প্রবীণ সংসদ সদস্য এবং ঢাকার বাইরে অবস্থানকারী সংসদ সদস্যদের উপস্থিত হতে আগেই নিরুৎসাহিত করা হয়।

অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের জন্য তিনি শোক প্রকাশ করেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যেও অধিবেশন আহ্বানের কারণ ব্যাখ্যা করেন স্পিকার। সম্ভাব্য সব স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অধিবেশন আহ্বানের কথাও জানান তিনি।

এর পরপরই স্পিকার নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যে শনিবার জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

সংসদের এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার সংসদ বসার বাধ্যবাধকতা সংবিধানে রয়েছে। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা ছিল।

অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনে জনসমাগম এড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের খবর সংগ্রহে সংসদে না যেতে অনুরোধ করা হয়।এছাড়া অধিবেশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের উপস্থিত না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।