ঢাবি ছাত্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছাত্রীর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের আরেক ছাত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2020, 06:44 PM
Updated : 8 April 2020, 06:55 PM

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ফেইসবুক গ্রুপে এক পোস্টে নাহিদ শিকদার দিহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ফেইসবুক মেসেঞ্জারে চালাচালি করা কিছু মেসেজের স্ক্রিনশট তুলে দেন তিনি। সেখানে ওই ছাত্রীকে অশ্লীল কথাবার্তা লেখা হয়েছে দেখা যায়।

দিহান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র এবং হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

অপরদিকে ভুক্তভোগী ছাত্রী একই বিভাগের ২০১৮-১৯  শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামের ফেইসবুক গ্রুপে ওই ছাত্রী ঘটনা তুলে ধরে লিখেছেন, “প্রথমবর্ষে থাকাকালীন সময়ে দিহান ভাই আমাকে ফেইসবুকে নক দেয়। বিভাগের বড় ভাই হিসেবে কথা বলি। প্রথমে ক্যাম্পাস লাইফ এনজয় করতে শেখার জন্য নানা উপদেশ দিচ্ছিলেন। মাস ছয়েক পর তিনি আমাকে নানাভাবে কুপ্রস্তাব দেওয়া শুরু করেন।

“একটা এত কম পরিচয়ে একটা মানুষ আমাকে এত নোংরা কথা বলতে পারে, সেটা আমার দুঃস্বপ্নেও ছিল না। তারপর উনি আরও কী কী বলেন, সেটা সব স্ক্রিনশট দেওয়া আছে। তারপর আমি উনাকে কিছু না বলেই ব্লক দিয়ে দিই। এবং এই ঘটনার পর থেকে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র তো বটেই, যে কোনো মানুষের প্রতিই আমার একটা অরুচি চলে আসে। আমি ক্লাস বাংক দিই, টোটালি আইসোলেটেড হয়ে যাই।”

২০১৮ সালের জুন মাসের এই ঘটনায় কেন এতদিন প্রতিকার চাওয়া হয়নি জানতে চাইলে ওই ছাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছর ফার্স্ট ইয়ারের নতুন মেয়েরা উনার টার্গেট হয়। আমরা ফ্রেশার থাকতে উনার ভিকটিম ছিলাম আমি। পরের বছর আরও দুজন মেয়ে উনার কাছে হয়রানির শিকার হয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কত?

“পরের বছর যাতে আমার কোনো ছোট বোন এই শয়তানের কবলে না পড়ে তাই উনার মুখোশ উন্মোচন করে দিলাম। আমি চাই উনি তার দোষ স্বীকার করুক। এ রকম যাদের কাছে তার দোষ আছে, সে তাদের প্রত্যেকের কাছে মাফ চাক। ডিপার্টমেন্টে এমন কোনো সিনিয়র না থাকুক, যার জন্য ডিপার্টমেন্টের প্রতি রুচিটাই উঠে যায় আমাদের।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগে বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকে ফোনে জানিয়েছি। যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ তাই লিখিত অভিযোগ দিতে পারছি না। তবে আজকেই আমি বিভাগের চেয়ারপার্সনসহ প্রক্টর বরাবর ইমেইল করে অভিযোগ জানাব।”

এই অভিযোগ অস্বীকার করে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন নাহিদ শিকদার দিহান।

সেখানে তিনি লিখেছেন, “২০১৯ সালের জুনে আমরা সবাই ইদের বন্ধে বাড়িতে ছিলাম। তখন আমার আইডি হ্যাকড হয়েছিল। আইডি হ্যাকড হওয়ার কারণে আমি দীর্ঘদিন আইডি ব্যবহার করতে পারিনি। এ সময় কে বা কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, আমি জানি না।”

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য দিহানকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।পরে ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিও অচল করে দেন দিহান।

তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে আগে কেন জানানো হল না? এতদিন পর কেন এটা ফেইসবুকে দিতে গেল? আমাদেরকে আগে জানাতে পারত। তারপরও আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখব এবং ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযোগ প্রমাণিত হলে দিহানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে ফোনে জানিয়েছে। আমি তাকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ঘটনা সত্য হলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”