করোনাভাইরাস: ঘরবন্দি মানুষের খাবারের নিশ্চয়তার তাগিদ নাগরিক সাংবাদিকদের

করোনাভাইরাসে সঙ্কটে সবাই ঘরবন্দি থাকায় দেশজুড়ে কর্মহীন মানুষদের খাবার নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন নাগরিক সাংবাদিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2020, 01:41 PM
Updated : 8 April 2020, 02:43 PM

সরকারের ত্রাণ সহযোগিতা ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

বিশ্বজুড়েই নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে এখন।

দেশ-বিদেশে মানুষের অবরুদ্ধ সময়ের চিত্র জানাতে বুধবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক লাইভে যুক্ত হন চার নাগরিক সাংবাদিক।

লাইভে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অংশ নেওয়া ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই নাগরিক সাংবাদিকরা মনে করেন, সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ৩ বছর ধরে নাগরিক সাংবাদিকতা করা নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন মহামারী থেকে বাঁচাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার তাগিদ দেন।

সরকারি নির্দেশনা না মানায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষদের নিগ্রহের সংবাদ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

এসব পদক্ষেপকে বাড়াবাড়ি মন্তব্য করে নাভিদ বলেন, “আয়হীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। ক্ষুধার্ত মানুষকে বন্দি করে রাখতে পারবেন না। তাদের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। যাদের খাবার নাই, সঞ্চয় নাই, তারা ঘরে কিভাবে থাকবে? তাকে তো খেতে হবে।”

বগুড়াসহ বিভিন্নস্থানে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ চুরির বিষয়টিও তুলে ধরেন এই নাগরিক সাংবাদিক।

“সরকার সাহায্য করছে। কিন্তু অসহায় মানুষের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। অসৎ মানুষরা ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে আবার সে ত্রাণ ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তা ঠিক হচ্ছে না। সেজন্য প্রশাসনকে আরও সজাগ হতে হবে। তৎপরতায় সমন্বয় আনতে হবে।”

বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এ অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হেয় না করার অনুরোধ জানিয়ে নাভিদ বলেন, “বিচ্ছিন্ন থাকার দরকার আছে। কিন্তু ঘৃণা নয়।”

ফ্রান্সে থাকা গোলাম মোর্শেদ উজ্জ্বল ২০১৩ সাল থেকে ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে নাগরিক সাংবাদিকতা করছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে ফ্রান্সে সরকারের ধীরগতির পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশটির নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

“অনেকে ত্রাণ চুরি করছে। দুর্যোগে পাশে না থেকে এ পরিস্থিতিতে কিভাবে তারা ত্রাণ চুরি করে? নীতি-নৈতিকতার জায়গায় আমাদের ভাবার সময় এসেছে। এজন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। ত্রাণের দায়িত্ব যদি সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান হবে।

“আমাদের হাতে এখনও সময় আছে, যে সময়টা আছে, সে সময়েও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মহামারী থেকে উত্তরণ সম্ভব।”

নাগরিক সাংবাদিক ঈশিতা বিনতে শিরীন নজরুল আট বছর ধরে লিখছেন ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে অতিরিক্ত কেনাকাটার কারণে জার্মানিতে খাদ্য পেতে বেগ পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।

“বেশিরভাগ জিনিস সুপারশপে ছিল না। ৪-৫ দিন খাবারের সন্ধানে বেরুতে হয়েছে। মানুষ ডাল-চাল বিপুল পরিমাণে সংগ্রহ করেছে। একমাস ধরে তারা মজুদ করেছে।”

মহামারী ঠেকাতে জার্মান সরকারের  বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ঈশিতা বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগী অনুসন্ধান, তাদের আইসোলেশনে রাখা ও অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়েছে জার্মান সরকার।

“জার্মানিতে আক্রান্তরা যাদের কনটাক্টে এসেছে সবাইকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজেদের দায়িত্বে রোগী অনুসন্ধান করছে সরকার। গত ১ সপ্তাহে ১ মিলিয়নের বেশি টেস্ট করেছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম এখানে।

“রোগটি যাতে না ছড়ায় সে বিষয়ে তারা কাজ করছে। যারা না খেয়ে আছে, তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ৩ মাস পর অর্থনীতির কী হবে. সেদিকে নজর দেওয়ার চেয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে এখনই যা করা দরকার, তা করছে।”

বাংলাদেশে ত্রাণ তৎপরতায় নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন এই নাগরিক সাংবাদিক।

তিনি বলেন, “মানুষের কাছে ত্রাণ যাচ্ছে কিনা দেখতে হবে। ১০ টাকা কেজি চাল দিলেই হবে না। তা রান্নার জন্য দরিদ্র মানুষের আরও কিছু জিনিস প্রয়োজন। সেটি না পেলে সে চাল বিক্রি করবে। এভাবে সংক্রমণ আরও বাড়বে। এসব জায়গায় সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। যারা না খেয়ে আছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

করোনাভাইরাসের মধ্যেই নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন ও বর্ণবাদ বেড়ে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।

নাগরিক সাংবাদিক শফিক মিতুল মনে করেন, শিক্ষিত মানুষরাও সচেতন নন।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

“করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা ২ থেকে ৩ মাস সময় পেয়েছি। কিন্তু এ সময়টাতে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। মহামারী মোকাবেলায় কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাও ছিল না। পরিকল্পনা থাকলে এখন এত সঙ্কট হত না।

“যেহেতু রোগটি এখনো সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েনি, তাই যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”

নাগরিক সাংবাদিকদের নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লাইভ আয়োজন ‘করোনাভাইরাস: মহামারীর এই সময় কেমন আছি’ এর সঞ্চালনা করেন ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মডারেটর আইরিন সুলতানা।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা হলেও ঠেকাতে পারে আমাদের কিছু আচরণ। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, বয়স্কদের সুরক্ষিত রাখা, পরিচ্ছন্ন থাকা এবং গুজবে কান না দেওয়া- এসবই নিরাপদ রাখবে আপনাকে-আমাকে।”