রোগী ফিরিয়ে দেওয়া ডাক্তারদের কড়া বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

দেশে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেসব চিকিৎসক প্রত্যক্ষভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসেননি তাদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2020, 09:06 AM
Updated : 7 April 2020, 01:55 PM

বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমন খবর পাওয়ার কথা তুলে তিনি বলেছেন, যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা চাকরি করতে পারবেন কিনা, তা ভাবা হবে।

প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদেরকে সঙ্গে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নির্দেশনা দিতে গিয়ে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণে যুক্ত অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে এসময় আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে এটা তাদের জন্যই করব যারা এই করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে শুরু। মূলত মার্চ মাস থেকে এটা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। এই মার্চ মাসে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন এই প্রণোদনাটুকু তাদের জন্য।

“আর যারা কাজ করেন নাই, যারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়েছেন, যেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি, অন্য সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা পায়নি। তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি মনে করেন, আমাদেরকে শর্ত দেন যে, আমাদেরকে সেটা দিলে আমরা আসব, আমি বলব যে সেটা দিতে হলে আগামীতে কীভাবে কাজ করেন… এই দুঃসময় যে যাবে তা আমরা অবর্জাভেশনে রাখব। অন্তত এই তিন মাস তাদের কাজ দেখব। সেখানে দেখব কেউ সত্যিকারভাবে মানুষের সেবা দেন কিনা। তারপরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করব। কিন্তু শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনব না।

“যাদের মধ্যে এই মানবতাবোধটুকু নেই, তাদের জন্য প্রণোদনা দিয়ে আনার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদি বাংলাদেশে এমন দুর্দিন আসে, প্রয়োজনে আমরা বাইরে থেকে ডাক্তার নিয়ে আসব, বাইরে থেকে নার্স নিয়ে আসব। কিন্তু এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না, এটা হল বাস্তবতা।”

কাজ না করা চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারা এখন যতই মিটিং করুক, শর্ত দিক, ওই শর্ত দিয়ে আমার কিছু আসে না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কিনা সেটাই চিন্তা করতে হবে। ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন?”

শেখ হাসিনা বলেন, “একজন রোগী আসলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্রোন পরে নেন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস দেন, অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধোন, রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে? আর একজন রোগী দৌড়াদৌড়ি করে, ঘুরে সেই রোগী কেন মারা যাবে?”

এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে বাড়িতে মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ টানেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষে (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) পড়ুয়া সুমন চাকমা নামের ওই শিক্ষার্থী ছিলেন ক্যান্সারের রোগী। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল, মুগদা হাসপাতাল এবং আইইডিসিআরে গিয়ে কোনো চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

পরে সোমবার সকালে খাগড়াছড়ির ইটছড়িতে নিজের বাড়িতে মারা যান সুমন চাকমা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কেন মারা যাবে? এই রোগী যখন যেখানে যেখানে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল, আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। তাদের ডাক্তারি করবার মতো বা চাকরি করবার মতো সক্ষমতা নাই। তাদের বের করে দেওয়া উচিত চাকরি থেকে, এটা আমি মনে করি।”

সারাবিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাই ভয় পাবে, এটা মানি আমি। কিন্তু একজন ডাক্তার, তার একটা দায়িত্ব থাকে।

“আর তাদের সুরক্ষার জন্য যা যা দরকার আমরা তো দিয়ে যাচ্ছি, ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। লাগলে আমরা আরও করব, সেখানে তো আমরা কোনো কার্পণ্য করছি না। আমরা দেশে তৈরি করছি (সুরক্ষা উপকরণ), বিদেশ থেকে নিয়ে আসছি। যতরকম, যা দরকার, আমরা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ এটা সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা।”

সামাজিক নিরাপত্তার বাইরে যারা রয়েছেন, তাদেরকেও সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যাদেরকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি, তাদের তো দিচ্ছিই, কিন্তু এর বাইরের যে শ্রেণিটা, যারা হাত পাততেও পারছে না, তাদের তালিকা করে, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, এই কাজটা আপনারা করবেন।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে আবারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এপ্রিল মাস নিয়ে চিন্তা থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে চিন্তার কিছু নেই, এগুলো আমরা সবসময় মোকাবেলা করেছি, আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।”

তবে কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে তা গোপন না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।