এক দিনে শনাক্ত ৩৫, আক্রান্ত বেড়ে ১২৩ জন

পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে; একদিনে নতুন ৩৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2020, 07:06 AM
Updated : 6 April 2020, 01:20 PM

আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখা বেড়ে হয়েছে ১২ জন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে এক অনুষ্ঠানে নতুন করে চারজনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সেই তথ্য সংশোধন করে দেন।

নতুন রোগীর এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। এক মাস আগে দেশে প্রথমবারের মত কারো দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ নিয়ে সবশেষ তথ্য উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। আক্রান্তদের ৩০ জন পুরুষ, ৫ জন নারী।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বয়স শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি ১১ জন আছেন। এছাড়া ছয়জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে।

যে তিনজন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালকও আছেন। সোমবার সকালে ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এক সপ্তাহ আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় জানিয়ে ডা, ফ্লোরা বলেন, “যেহেতু এক সপ্তাহ আগেই তাকে শনাক্ত করেছিলাম, এ কারণে তার কন্টাক্টে আসা সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছি।

“বাকি দুজনের মৃত্যু হয় হাসপাতালের আসার পরপর। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তাদের দুজনের বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সংক্রমণের উৎস খোঁজা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত যতজনকে পাওয়া গেছে, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।”

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, “পুরো নারায়ণগঞ্জকেই আমরা একটা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ওইসব এলাকায় কোয়ারেন্টিন কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি। সেখানে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে আছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৫১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন এবং ২৯৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন এবং ৩০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৪৮০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ১১ হাজার ৩৩০ জন।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪৪৩ জনকে আইসোলেশন করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩৩৬ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন আইসোলেশনে আছেন ১০৭ জন।

মৃতের সংখ্যায় ‘বিভ্রান্তি’

কোভিড-১৯ গত ২৪ ঘণ্টায় কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুইরকম তথ্য দেওয়ায় এদিন বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সংশোধিত তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

সকালে মহাখালীতে এক জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ জন এবং মৃত্যু ৪ জন বলে জানিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার বরাতে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

কিন্তু এর ঘণ্টা দুই পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন করে ৩৫ জন আক্রান্তের পাশাপাশি তিনজন মারা গেছেন।

দুই রকম তথ্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে একটি ব্যাখ্যা দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকালে যে সংখ্যাটি বলেছিলেন, সেটা তারই দেওয়া। কিন্তু এরপর সেই তথ্য আরও হালনাগাদ হয়েছে।

তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেল কীভাবে- এই প্রশ্নে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সেই সময় নাম নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা গেল এই যে দুইটা নাম… আসলে বানানের একটু সমস্যা ছিল। তখন তারা মনে করেছিল দুইটা। পরে যাচাই করে দেখা গেছে যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।”

মহাপরিচালক বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে সেটাই সবশেষ তথ্য। এটা নিয়ে আর বিভ্রান্তির কোনো ‘সুযোগ নেই’।