আপাতত মসজিদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ ইসলামি চিন্তাবিদদের

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষকে মসজিদে না আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 04:23 PM
Updated : 5 April 2020, 04:30 PM

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় সমাগম থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানিয়ে তারা বলছেন, এক্ষেত্রে মসজিদ বন্ধ করার দরকার নাই। ইমাম-মোয়াজ্জিন আর কয়েকজন মুসল্লি মিলে জামাত চালু রাখবেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, মুসল্লিরা যেন নিজ উদ্যোগে মসজিদে না যান। সংক্রমণ রোধে এমন অবস্থায় মসজিদে না গেলে কোনো অসুবিধা নেই।

“কিন্তু মসজিদ বন্ধ করা ঠিক হবে না। সেখানে ইমাম-মুয়াজ্জিন আছেন, দুয়েকজন মুসল্লি মিলে নামাজ আদায় করবেন, তাতে ফরজ আদায় হয়ে যাবে।”

কারফিউ ঘোষণা করে মানুষকে ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনসমাগম না কমলে সরকার কারফিউ দিতে পারে। মক্কা-মদীনায় কারফিউ দিতে আমরা দেখেছি। কঠোর হতে সরকারের এতো দ্বিধা কেন আমি সেটা বুঝি না।”

মসজিদে নামাজ চালুর বিষয়ে একই রকমের মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজীও।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসের যে মহামারী তাতে এখন আমাদের সতর্ক হতে হবে। বাড়াবাড়ি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। বাড়াবাড়ি করলে বিপদ বাড়বে।”

মহামারী থেকে দূরে থাকতে হযরত মুহাম্মদের (সা.) আহ্বান স্মরণ করিয়ে এই ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, “দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাব, এখন সবাইকে জামাতে নামাজ আদায় করতেই হবে, এমনটা নয়। মসজিদকে জীবন্ত রাখার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিন ও কয়েকজন জামাতে নামাজ আদায় করবেন।

“এক্ষেত্রে তারাও চিকিৎসকদের যে পরামর্শ ৩ ফুটের দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং মসজিদের পরিবেশ স্বাস্থ্য সতর্কতা অনুযায়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন।”

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে ধর্মীয় নেতারা ও সরকার সাধারণ মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক মিয়াজী বলেন, “ঝুঁকি থাকার পরও আলেম সমাজ মানুষকে তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে মানুষের মধ্যে বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে। আবার যেসব আলেমদের বক্তব্য বা ফতোয়া মানুষ শুনবে-তাদের দিক থেকে সম্মিলিত বক্তব্য আনতে পারেনি সরকার।”

করোনাভাইরাস মহামারীতে ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে নামাজ বন্ধ করা হয়েছে মক্কা ও মদীনার মসজিদেও।

ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারসের ফতোয়ার ভিত্তিতে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেশটি।

বাংলাদেশে জুমার নামাজ সীমিত আকারে পড়ার পরামর্শ এলেও ধর্মানুভূতি বিবেচনায় নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্তের দিকে যায়নি সরকার। শবে মিরাজের পর শবে বরাতের ইবাদতও ঘরে করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

গত ৩০ মার্চ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ফতোয়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। নামাজ চালুর রাখলেও সেক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ পালনের পরামর্শ দেওয়া হয় সেখানে।

সেখানে মসজিদে নিয়মিত আযান ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত এলেও মসজিদে না এলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা নেই বলে জানানো হয়।

ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল, “যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অবকাশ আছে।”

সেখানে আরও বলা হয়, “রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা) পরিপন্থি নয়। বরং নবীজীর (সা.) সুন্নত।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত; সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ভোগা ব্যক্তি; আক্রান্ত দেশ-অঞ্চল থেকে আসা ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয় সেই ফতোয়ায়।

করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে মসজিদে নামাজ আদায়ের বিষয়ে আলেম সমাজের ‘সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত’ আগামী দুয়েক দিনে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান।

তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে আবার বসব। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত সবাই জানতে পারবে।”