কয়েকটি দেশ থেকে কিছু প্রবাসী ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত

করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময়েও মানবিক কারণে কয়েকটি দেশ থেকে কিছু বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 02:05 PM
Updated : 5 April 2020, 02:48 PM

রোববার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত আসে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সভায় সিদ্ধান্ত এসেছে প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হবে। কুয়েতের সেই ফিরতি ফ্লাইটে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হবে।

“এছাড়া এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম-ইপিএসের আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ১৫০ জন কর্মী এবং সেখানে অধ্যয়নরত ২৬ শিক্ষার্থীকে আনতে বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইট কোরিয়ায় পাঠানো হবে।”

দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরুতে কোভিড-১৯ রোগের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটলেও তারা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে সাড়ে পাঁচশর মতো কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বে বিমান চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও প্রায় দেশের নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে বন্ধ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে নভেল করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য করণীয় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

সভায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য সরকার খাদ্য, চিকিৎসাসহ সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য সব ধরনের সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এজন্য দূতাবাসগুলোর চাহিদা অনুসারে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

“করোনা ভাইরাসের কারণে মানবিক বিবেচনায় কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্থ বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”

দেশে ফেরত আনা প্রবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে বিদেশ থেকে আনা ব্যক্তিদের যেভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল, নতুনদেরও কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক হবে (ফাইল ছবি)

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “প্রবাসীরা দেশের সম্পদ। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব।

“বিভিন্ন দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হচ্ছে। এর ফলে সেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের শ্রম কূটনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত হবে এবং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রাধান্য পাবে।”

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান জানান, যেসব বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা ইকামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ভিসা বা ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে, তারা যাতে পুনরায় ফিরে যেতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

কোনো কর্মী বিদেশে চাকরিচ্যুত হলে অথবা নিয়োগকারী কোম্পানি যদি কর্মী ছাঁটাই করে সেক্ষেত্রে তাদেরকে দেশে না পাঠিয়ে সেদেশের অন্য কোনো কোম্পানিতে নিয়োগের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

ইমরান জানিয়েছেন, প্রবাসীদের আবাসনের সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ ঋণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ।

এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।