করোনাভাইরাস: আরও ১৮ জন আক্রান্ত, মৃত্যু বেড়ে ৯

একদিনেই নতুন ১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮৮ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 08:28 AM
Updated : 20 Oct 2021, 10:54 AM

আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখা বেড়ে হয়েছে ৯ জন। 

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এটাই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা। সরকার করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর পর রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। 

আক্রান্তদের মধ্যে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, যিনি মারা গেছেন তিনি ৫৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ, বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পরে নতুন আক্রান্ত, মৃত্যুসহ সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য দেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ১৪টি কেন্দ্রে সংগৃহীত ৩৬৭টি নমুনার ফলাফলে ১৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৩ জনের কোভিড-১৯ নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। বাকি ৫ জনের পরীক্ষা হয়েছে ঢাকার বাইরের গবেষণাগারে। নতুন রোগীদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ, ৩ জন নারী।

মোট ৩৩ জন সুস্থ্ হয়ে ওঠায় এখন মোট ৪৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে আছেন ৩২ জন, আর ১৪ জন বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডা. ফ্লোরা বলেন, “ওই ১৪ জনের লক্ষণ উপসর্গ খুবই মৃদু, তারা আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।”

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের একজন, ৩১ থেকে ৪০ এর মধ্যে ২ জন, ৪১ থেকে ৫০ এর মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ এর মধ্যে ৯ জন, এবং দুজন ষাটোর্ধ্ব।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন ঢাকার, ৫ জন নারায়ণগঞ্জের এবং ১ জন মাদারীপুরের। তাদের বেশিরভাগই কয়েকটি ‘ক্লাস্টার’ (যেখানে একসঙ্গে অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন) থেকে এসেছেন বলে জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার বাসাবোতে ৯ জন, বৃহত্তর মিরপুরে ১১ জন, মাদারীপুর এবং নারায়ণগঞ্জে ১১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন।

“মাদারীপুরে ক্লাস্টার আগে থেকেই ছিল। এ কারণে সবার আগে আমরা মাদারীপুরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছি। এই ১৮ জনের বেশিরভাগই আগে পাওয়া ক্লাস্টারের অংশ।

“মিরপুরেও আমরা আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাদের ছাড়াও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আমরা পরীক্ষা করছি, যাতে রোগটি সেখান থেকে ছড়িয়ে না পড়ে।”

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলা যায়। তবে তা ক্লাস্টার ভিত্তিতে আছে।

“এখনও বলছি, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এটা যদি না করি তাহলে সংক্রমণ কিন্তু ক্লাস্টার থেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। সুতরাং সবাইকে অনুরোধ করছি সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলুন।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৮০২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন, ২৬৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এর মধ্য গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন ১ হাজার ১১১ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৯ জন।

এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪১২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে; ফলে এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ১২ হাজার ৬৫৯ জন।

এখন পর্যন্ত মোট ৫২০ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৮৪ জন।